মহান আল্লাহ পাক উনার কোন বিষয়, কোন সৃষ্টি হিকমত থেকে খালি নয়, ফলে চাঁদও মহান আল্লাহ পাক উনার অসাধারণ এক হিকমতময় সৃষ্টি। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে এসেছেঃ
ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নিকট চাঁদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে, আপনি জানিয়ে দিন, এটা হচ্ছে মানুষের জন্য ইবাদত উনার সময় নির্ধারক এবং সম্মানিত হজ্জ উনার সময় ঠিক করার মাধ্যম। (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৯)
আবার পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে এসেছেঃ
তোমরা চাঁদ দেখে রোজা কর, চাঁদ দেখে ইফতার কর (রোজা ভাঙ্গ), আকাশ মেঘলা থাকলে মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ কর।
তাহলে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আদেশ নিষেধ সমূহ থেকে আমরা পাচ্ছিঃ
১) চাঁদ মানুষের ইবাদতের সময় নির্ধারক
২) সম্মানিত হজ্জ উনার সময় ঠিক করার মাধ্যম।
৩) চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে রোজা ভাঙতে হবে। অর্থাৎ সকল মাস চাঁদ দেখে গণনা করতে হবে
৪) আকাশ মেঘলা থাকলে মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করতে হবে।
তাহলে যারা খোদাদ্রোহী, যারা শয়তানের অনুচর, কাফির মুশরিক তারা কি করবে? তারা উল্লেখিত প্রতিটি আদেশ মুবারক উনার খিলাপ করবে।
১) (চাঁদ মানুষের ইবাদতের সময় নির্ধারক) চাঁদকে ইবাদতের সময় নির্ধারক হিসেবে না মেনে তারা মনগড়া নিয়ম বের করবে। যেমন বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া।
২) (সম্মানিত হজ্জ উনার সময় ঠিক করার মাধ্যম।) সম্মানিত হজ্জ উনার সময় ঠিক না করে তারিখ আগ-পিছ করবে।
৩) (চাঁদ দেখে রোজা রাখতে হবে রোজা ভাঙতে হবে। অর্থাৎ সকল মাস চাঁদ দেখে গণনা করতে হবে) চাঁদ না দেখে কম্পিউটারে দেখে বা হিসেব করে রোজা ভাঙবে বা মাস শুরু করবে।
৪) (আকাশ মেঘলা থাকলে মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করতে হবে।) আকাশ মেঘলা থাকলে চাঁদ দেখা না গেলেও মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে হলেও মাস শুরু করবে।
বাস্তবে হচ্ছেও তাই। কিন্তু আমাদের বিষয়টি জানা ছিলনা। ১৯৪৮ সাল থেকে অর্থাৎ সি আই এ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ষড়যন্ত্র চলছে। আর ষড়যন্ত্রের মুল সহযোগী ওহাবী, ইহুদীদের দ্বারা শাসিত দেশ সউদী আরব।
ফলে আমাদের আলোচনায় থাকছে প্রথমে চাঁদের উপর শরীয়ত সম্মত আলোচনা কাফির –মুশরিক এবং ওহাবী ইহুদীদের ষড়যন্ত্রের মুখোশ উম্মোচন।
১) চাঁদ বিষয়ে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফায়সালাঃ
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে পাক-এ ইরশাদ হয়েছে,
يسئلونك عن الاهل قل هى موقيت للناس والحج.
“লোকেরা আপনার কাছে চাঁদ সম্পর্কে জানতে আরজি করে। আপনি বলে দিন সেটা হলো মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৯)
হাদীছ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ابى هريرة رضى الله تعالى قال قال رسول صلى الله عليه وسلم صوموا لرؤيته وافطروا لرؤيته فان غم عليكم فاكملوا عدة شعبان ثلثين.
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা রোযা রাখ চাঁদ দেখে এবং রোযা ভাঙ্গ (শাওওয়ালের) চাঁদ দেখে। যদি মেঘের কারণে তোমাদের প্রতি চাঁদ গোপন থাকে তবে শা’বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-১৭৪)
২) অন্যান্য মাযহাবে চাঁদ দেখার বিষয় এবং আমাদের হানাফী মাযহাব উনার আলোকে চাঁদ দেখার ব্যখ্যা।
সম্মানিত শাফেয়ী মাযহাবে প্রত্যেক শহরে শহরে চাঁদ দেখা শর্ত। কিন্তু সম্মানিত হানাফী মাযহাবে বলা হয়েছে কোন এক উদয়স্থলে চাঁদ দেখা গেলে এবং নির্দিষ্ট দূরত্বে অন্য উদয়স্থলে চাঁদ দেখা না গেলে ” উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়”। এ বিষয় বোঝার জন্য প্রয়োজন উদয়স্থল কি তা জানা এবং প্রাসঙ্গিক হাদীস শরীফ।
উদয়-অস্ত স্থল কি?
যে এলাকার পশ্চিমাকাশে চাঁদ দেখা যায়, সূর্য অস্ত যায়, সেটাই সে এলাকার বা অঞ্চলের উদয়-অস্ত স্থল।
এক মাত্বলউিন বা এক উদয়স্থলরে দূরত্ব সমান এক মাস সফররে পথ
এক উদয়স্থলের ব্যাখ্যা : ৩ দিন ৩ রাতের পথ অতিক্রম করলে হয় মুসাফির এবং তা দুরত্বে ৫৪ মাইল। তাহলে ১ দিন ১ রাতের পথ সমান ১৮ মাইল। ৩০ দিনে মোট দূরত্ব হয় ১৮x৩০ = ৫৪০ মাইল। (ফতওয়ায়ে শামী)
উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়:
পঞ্চগড় উদয়স্থলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছে কিন্তু ঢাকার উদয়স্থলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়নি আবার কক্সবাজার উদয়স্থলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছে
তবে কি ঢাকা আরবী মাস শুরু করবে না?
উত্তর হচ্ছে করবে। এই ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার বা ঢাকার সঙ্গে পঞ্চগড়ের উদয়স্থলের পার্থক্যটা গ্রহণযোগ্য নয়।
উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্যঃ
সউদি আরবের উদয়স্থলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশের উদয়স্থলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়নি আবার মালয়েশিয়ার উদয়স্থলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছে।
বাংলাদেশ কি তবে আরবী মাস শুরু করবে না?
উত্তর হচ্ছে করবে না। কেননা বাংলাদেশে দেখা যায়নি।
এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদয়স্থলের সঙ্গে মালয়েশিয়ার উদয়স্থল এবং সউদী আরবের উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। কেন এখানে মালয়েশিয়ার দেখা বা সউদী আরবের দেখা বাংলাদেশের জন্য গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না তা বুঝতে হলে হাদিস শরীফ বুঝতে হবে। নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয় আবার নির্দিষ্ট দূরত্বের পর উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য।
উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়: স্বপক্ষে হাদিস শরীফঃ
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ: تَرَاءَى النَّاسُ الْهِلَالَ فَأَخْبَرْتُ
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ عُمَيْرِ بْنِ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ عُمُوْمَةٍ لَّه مِنْ أَصْحَابِ النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنَّ رَكْبًا جَاءُوْا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْهَدُوْنَ أَنَّهُمْ رَأَوُا الْهِلَالَ بِالْأَمْسِ فَأَمَرَهُمْ أَنْ يُّفْطِرُوْا وَإِذَا أَصْبَحُوْا أَنْ يَّغْدُوْا إِلٰى مُصَلَّاهُمْ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد وَالنَّسَائِ
আবূ দাঊদ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হযরত আবূ উমাইর ইবনু আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট একদল আরোহী আসলেন এবং উনারা সাক্ষ্য দিলেন যে উনারা গতকাল শাওওয়ালের চাঁদ দেখেছেন। ফলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন সকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, নাসায়ী শরীফ)
আরোহী যাঁরা এসেছিলেন উনারা গতকাল শাওওয়ালের চাঁদ দেখেছিলেন। এখন আরোহীগণ যাত্রা যখনই শুরু করে থাকুন, আমরা শাওওয়ালের চাঁদ দেখার সময় থেকেই গণনা করবো। দ্বিতীয়ত উনাদের বাহন উট ঘোড়া যাই হোক না আমরা সে সময়ের দ্রুততম বাহন ঘোড়ার কথাই বিবেচনা করছি। একটি ঘোড়া সাধারণত ঘন্টায় ৮-১২ মাইল বেগে চলে। এখন যদি সন্ধ্যা ৬ টায় চাঁদ দেখে থাকেন আর দুপুর ১২টায় এসে পৌঁছে থাকেন তবে সময়ের পার্থক্য হবে ১৮ ঘন্টা। তাহলে একটানা কোন ঘোড়া ১৮ ঘন্টা চলে না এমনকি একটানা ঘন্টায় ১২ মাইল বেগেও চলতে পারে না তথাপি ধরে নিচ্ছি যে ঘন্টায় একটানা ১২ মাইল বেগে চলে ১৮ ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করেছিলেন। তাহলে মোট দূরত্ব হবে ১৮x ১২ = ২১৬ মাইল।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয় অর্থাৎ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার আকাশ মুবারক-এ চাঁদ দেখা না গেলেও ২১৬ মাইল দূরত্বের সংবাদ গ্রহণযোগ্য হয়েছিলো । অর্থাৎ উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য হয়নি যেহেতু তা ৫৪০ মাইলের মধ্যে।
এখান থেকে সহজ ব্যাখ্যা হতে পারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম তিনি পরের দিন রোযা রাখতে বারণ করেছেন এবং সকালবেলা ঈদের নামায আদায় করেছেন। কেননা কখন আরোহী এসে পৌঁছেছেন স্পষ্ট নয়। এই হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে- আল্লামা মাযহার রহমুতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, ওই বছর পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র ২৯শে রমাদ্বান শরীফ দিবাগত রাতে শাওওয়াল মাস উনার চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনাবাসী ৩০শে রমাদ্বান শরীফ রোযা রেখেছিলেন। এমতবস্থায় ওই দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দূর হতে আসলেন এবং উনারা সাক্ষ্য দিলেন যে, নিশ্চয়ই উনারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নতুন চাঁদ দেখেছেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের এ সংবাদকে গ্রহণ করে রোযা ভঙ্গের নির্দেশ মুবারক দিলেন এবং পরের দিন ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ মুবারক দিলেন।
এক্ষেত্রে উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়।
যখন উদয়স্থলের পার্থক্য গ্রহণযোগ্যঃ স্বপক্ষে হাদিস শরীফঃ
নিজ নিজ অঞ্চলে বা দেশে চাঁদ দেখে মাস শুরু করার পক্ষে নীচে হাদীছ শরীফ উনার দলীল দেয়া হলো-
হযরত কুরাইব রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনাকে শাম দেশে (বর্তমানে সিরিয়া) হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার নিকট কোন প্রয়োজনে প্রেরণ করলেন। তিনি বললেন “অতঃপর আমি আমার প্রয়োজন সমাধা করলাম এবং আমি শাম দেশে থাকা অবস্থায় পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার চাঁদ উদিত হয়। আমি জুমুয়ার (বৃহস্পতিবার দিবাগত) রাতে চাঁদ দেখলাম। অতঃপর পবিত্র রমাদ্বান মাস উনার শেষ দিকে পবিত্র মদীনা শরীফ আসলাম। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু আমাকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন যে আমরা শামে কখন চাঁদ দেখেছি।তখন আমি বললাম আমরা চাঁদ দেখেছি জুমুয়ার রাতে। তখন তিনি আবার প্রশ্ন করলেন আপনি কি চাঁদ দেখেছেন? আমি বললাম হ্যাঁ। মানুষেরাও চাঁদ দেখেছে এবং রোযা রেখেছে। হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনিও রোযা রেখেছেন। অতঃপর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বললেন কিন্তু আমরাতো চাঁদ দেখেছি শনিবার রাতে(জুমাবার সন্ধ্যায়)। অতএব আমরা ৩০ দিন পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অথবা শাওওয়ালের চাঁদ দেখা পর্যন্ত রোযা রাখব। তখন (আমি কুরাইব রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বললাম হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার চাঁদ দেখা ও উনার রোযা রাখা আপনার জন্য যথেষ্ট নয় কি? হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বললেন, না। আমাদেরকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এমনই নির্দেশ মুবারক করেছেন।
এখান থেকে পাই-
এক দেশের দেখা অন্য দেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
এক দেশ বা অঞ্চল থেকে অন্য দেশের বা অঞ্চলের দূরত্ব ছিল প্রায় ১ মাসের রাস্তা। ৫৪০ মাইলের অনেক অনেক বেশী
দেখার পার্থক্য ছিল ১ দিন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক ছিল চাঁদ দেখে মাস শুরু করা।
চাঁদ বিষয়ে আমাদের যা জানা জুরুরীঃ
১) অমাবস্যা কি ? অমাবস্যায় কি চাঁদ দেখা যায়?
নিচের ছবিটি দেখুন। ছবিতে চাঁদ মাঝে। পৃথিবী তার ডানে এবং সূর্য চাঁদের বামে। চাঁদ এখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে অবস্থান করছে।
চাঁদের যে অংশ সূর্যের দিকে সেখানে সূর্যের আলো পড়াতে সেই অর্ধেক অংশ আলোকিত। কিন্তু পৃথিবীর দিকের অংশ অন্ধকার। এ সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের অন্ধকার অংশ দেখা যায় না। এ অবস্থাকেই বলে অমাবস্যা।
২) নিউ মুন নয় জিরো মুন
৩) চাঁদের যে ইলম সংক্ষেপে আমাদের জানা প্রয়োজন।
নিউ মুন (New Moon) নয় জিরো মুন (Zero Moon)
নিউ মুন অর্থ নতুন চাঁদ অথচ এ চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। তাকে অমাবস্যা বলে।জিরো মুন অর্থ চাঁদের বয়স ০ ঘণ্টা ০ মিনিট। তারপর একটি নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছলে চাঁদ দৃশ্যমান হয়।
Crescent Moon বা বাঁকা চাঁদঃ- New Moon এর পর চাঁদ যখন দেখা যাওয়ার আকৃতিতে আকাশে উদয় হয় তখন তাকে ইংরেজীতে Crescent Moon এবং বাংলায় বাঁকা চাঁদ বলে। হিলাল বা বাঁকা চাঁদ কোন চন্দ্রমাস ২৯ দিন পূর্ণ হবার পর পশ্চিম আকাশে প্রথম দেখা যায় অথবা চন্দ্রমাস ৩০ দিন পূর্ণ হবার পর দেখা যায়।
বাঁকা চাঁদ বা হিলাল দেখার শর্তসমূহ কি কি?
চাঁদের বয়স: যখন অমাবস্যা সংঘটিত হয় তখন চাঁদের বয়স হয় শূন্য মিনিট। অমাবস্যার পর থেকেই চাঁদের বয়স বাড়তে থাকে এবং এক সময় দিগন্তরেখায় আমরা চাঁদকে দেখতে পাই। তাহলে চাঁদের সে বয়সটা কত? এখান থেকে আমরা একটা বিষয় নিশ্চিত যে ২৪ ঘন্টা বা ১ দিনের কম চাঁদের বয়স ঠিক কত হলে চাঁদ আকাশে প্রথম দেখা যাবে তা বলা মুশকিল। সাধারণভাবে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৭ ঘণ্টা এবং সর্বোচ্চ ২৩/২৪ ঘণ্টা। আর সে কারণেই চাঁদ দেখতে পাবার জন্যে অন্যান্য অনেক শর্তসমূহের মধ্যে চাঁদের বয়স মাত্র একটি শর্ত।
চন্দ্র-সূর্যের কৌণিক দূরত্ব: অমাবস্যার সময় চাঁদ-সূর্যের কৌণিক ব্যবধান শুন্য ডিগ্রি। অমাবস্যার সময় চাঁদ যত সরে আসতে থাকে সূর্যের সাথে তার কৌণিক ব্যবধানও বাড়তে থাকে। বর্তমানে বায়ুমন্ডলের দূষণ, আলোর দূষণ এবং ধূলাবালির কারণে চাঁদ সূর্য থেকে ৯-১২ ডিগ্রী পর্যন্ত সরে আসলে তারপর চাঁদ দৃশ্যমান হয়। এই পরিমাণ কোণ তৈরী করতে চাঁদের লাগে প্রায় ১৭ থেকে ২৩ ঘণ্টা।
চাঁদের উচ্চতা: আমরা যখন খোলা মাঠের দিকে তাকাই, যেখানে আকাশটা যমিনের সাথে মিশে গেছে বলে মনে হয়, সে স্থানটিকে দিগন্তরেখা বা উদয় রেখা বলে। সাধারণত যে চাঁদ সূর্যাস্তের সময় দৃশ্যমান হবে সাধারণতঃ সে চাঁদকে ১০ ডিগ্রী উচ্চতায় বা তার চেয়েও অধিক উচ্চতায় অবস্থান করতে হয়।সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার উপর ১০ ডিগ্রীর উপর অবস্থান করলে ধীরে ধীরে চাঁদ নীচের দিকে নামতে থাকে এবং কেবলমাত্র ভূমি থেকে ৪-৫ ডিগ্রী উপরে থাকে তখন ২৯ দিনের চাঁদকে দেখা যায়।
চাঁদ ও সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময়ের পার্থক্য: চন্দ্র ও সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময়ের পার্থক্য হয় যদি ৪০ মিনিট তবে প্রথম ১০ মিনিট এবং শেষ ১০ মিনিট চাঁদ দেখা যায় না। মাঝের ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ ১০ মিনিটের মধ্যে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং যখন চন্দ্রাস্ত এবং সূর্যাস্তের সময়ের পার্থক্য ৪০ থেকে ৪২ মিনিটের মধ্যে হয় তবে সময়কে ৪ ভাগ করে তৃতীয় ভাগে চাঁদ খোঁজার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।সুতরাং শেষ সময়ের দিকে চাঁদ দেখার জন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
☀ বাঁকা চাঁদ দেখার জন্য সাধারণত ১৫-৩৫ মিনিট ধৈর্য্য ধরতে হয়।
☀ একবার দেখে ফেলে চোখ সরিয়ে নিয়ে আবার তা দেখতে হবে।
☀ সব সময় না হলেও সচরাচর ২৯ দিনের চাঁদ হয় চিকন এবং অবস্থান করে দিগন্ত রেখার খুব কাছে এবং
☀ ৩০ দিনের পুরনো চাঁদ হয় তুলনায় বড় এবং অবস্থান করে উচ্চাকাশে।
আজীমাত (Azimuth) কি?: চাঁদ প্রতি মাসে একই স্থানে দেখা যায় না। পশ্চিমে ডান ও বামে সরে সরে আসে। যখন আজীমাত ২৭০ ডিগ্রী বলা হবে তা হবে সরসরি পশ্চিমে। ২৭০ এর বেশি আজীমাত হলে চাঁদ খুঁজতে হবে পশ্চিমের ডানে এবং ২৭০ এর কম হলে চাঁদ খুঁজতে হবে পশ্চিমের বায়ে।
আমাদের দেশ যখন চাঁদ দেখে তার দু’দিন পূর্বে সৌদি আরব চাঁদ দেখতে পাবে না। এই দেখার পার্থক্য হবে ১ দিন।
অর্থাৎ কোন কারণে বাংলাদেশ দেখতে না পেলে আর সৌদি আরব দেখলে তা পরের দিন সন্ধ্যায় আকাশ পরিষ্কার থাকলে অবশ্যই চাঁদ দেখা যাবে।
আর কখনও বাংলাদেশ আগে দেখলে সৌদি আরব অবশ্যই আমাদের পরে দেখবে।
যদি শোনা যায় আমাদের দুদিন পূর্বে সৌদি আরব চাঁদ দেখেছে তবে সে দাবী মিথ্যা।
৪) সউদী আরব কি প্রতি আরবী মাস আমাদের ১/২ দিন আগে শুরু করতে পারে?
কোন দেশে প্রথম চাঁদ দেখা যাবে তা নির্দিষ্ট নয়। সউদী আরবের পূর্বের কোন দেশ আগে চাঁদ দেখতে পারে বা সউদি আরবের পশ্চিমের কোন দেশ আগে চাঁদ দেখতে পারে। আবার কখনো সউদী আরবেও চাঁদ দেখা যেতে পারে। কিন্তু প্রতি মাসে সউদি আরব বাংলাদেশের পূর্বে চাঁদ দেখতে পারেনা।
৫)পৃথিবীর যে কোন স্থানে চাঁদ প্রথম দেখা যেতে পারে।
৬) সব সময় পশ্চিম দিকে চাঁদ আগে দেখা যায়না
অনেকেই মনে করেন, সৌদি আরব আমাদের দেশের পশ্চিমে তাই সেখানে প্রথম চাঁদ দেখা যাবে। আসলে সকল দেশের পশ্চিমেই আরেকটি দেশ আছে। সুতরাং সৌদি আরবেই প্রথম চাঁদ দেখা যাবে ধারনাটি সঠিক নয়। অনেকে সউদী আরবকে পৃথিবীর কেন্দ্র হিসেবে মনে করে নিয়ে ভাবেন চাঁদ হয়তো সেখানেই আগে দেখা যাবে। প্রকৃতপক্ষে চাঁদ দেখার বিষয়টি পৃথিবীর কেন্দ্রের সাথে সম্পর্কিত নয়। চাঁদ যে কোন মাসে যে কোন দেশেই প্রথম দেখা যেতে পারে। সউদী আরবই সর্ব প্রথম চাঁদ আগে দেখবে এই ধারনাটা সঠিক নয়।
৭) চাঁদ কোনদিকে উঠে?
চাঁদ সূর্যের মত পূর্ব দিকে উদিত হয় এবং পশ্চিমে অস্ত যায়। ২৯ দিনে আমরা যে বাঁকা চাঁদ পশ্চিমে দেখি তাও পূর্ব দিকে উদিত হয় কিন্তু দিনের আলোর কারণে তা আমরা দেখতে পাইনা। চাঁদ সারাদিন আকাশে থেকে যখন পশ্চিমে অস্ত যেতে থাকে তখন তার প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে এলে আমরা চাঁদ দেখতে পাই।
৮) পৃথিবীতে একদিনে কি ঈদ পালন করা সম্ভব?
পৃথিবীর কোন অংশে দিন হলে অন্য অংশে থাকে রাত। ফলে ভৌগলিক কারণেই পৃথিবীতে একদিনে ঈদ পালন করা সম্ভব নয়।
৯) সউদি আরবের সাথে ঈদ বা রোজা পালন করা কতটা ঠিক?
অনেকে বলে থাকেন সউদি আরবে চাঁদ দেখার উপর সারা পৃথিবীতে ঈদ পালন করা উচিত। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি অবান্তর। ধরা যাক, সউদি আরবের আকাশেই প্রথম ঈদের চাঁদ দেখা গেল। তাহলে সউদি আরবের পশ্চিমে অবস্থিত দেশগুলোতে সউদি আরবের সাথে একই দিনের সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলেও সউদি আরবের পূর্ব দিকের দেশগুলোকে পরবর্তী দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ তাদের ঈদ একদিন পিছিয়ে যাবে। আর যদি তারা সউদি আরবের সাথে একই দিনে ঈদ উদযাপন বা পালন করতে চায় তাহলে তা হবে তাদের দেশ থেকে চাঁদ না দেখে ঈদ করার শামিল। কোন দেশ যদি সউদি আরবের আগেই চাঁদ দেখে থাকে তবে কি সে দেশ অপেক্ষা করবে সউদি আরবের চাঁদ দেখা পর্যন্ত? ধরা যাক, কোন এক রমাদ্বান মাসের শেষে রিয়াদে প্রথম চাঁদ দেখা গেল এবং ধরা যাক সেদিন সোমবার সন্ধ্যা, সময় ৫.৩০ মিনিট। তখন আর্জেন্টিনায় সময় সোমবার সকাল ১১.৩০ মিনিট। রিয়াদের চাঁদ দেখা অনুযায়ী আর্জেন্টিনার মুসলমানগণ ঈদের নামায পড়তে চাইলেও তা সম্ভব নয়। কেননা তখন ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে না। আবার রিয়াদে পরের দিন মঙ্গলবার, ভোর ৬.৩০ মিনিটে যখন ঈদের জামায়াত হবে তখন আর্জেন্টিনায় মঙ্গলবার, ভোর ১২.৩০ মিনিট। সে সময় ঈদের নামায পরা সম্ভব নয়। যেহেতু রিয়াদের সঙ্গে আর্জেন্টিনার সময়ের পার্থক্য ৬ ঘণ্টা সউদি আরবে যে সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা যাবে তার ৬ ঘণ্টা পর আর্জেন্টিনায় চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আর্জেন্টিনাবাসী সোমবার, ভোর ৬.৩০ মিনিটে যখন নামায পরবে তখন সউদি আরবে সোমবার দুপুর ১২.৩০ মিনিট।
চাঁদ নিয়ে কেন বিভ্রান্তি ? নেপথ্যে কে?
কুরআন শরীফ-এ স্পষ্টভাবে বাঁকা চাঁদকে সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অমাবস্যার চাঁদ, জোছনার চাঁদ, অর্ধ চন্দ্র, সূর্যাস্তের কিছু পূর্বে ডুবে যাওয়া চাঁদ, নির্দিষ্ট বয়সের চাঁদ এসবের উল্লেখ করা হয়নি। অথচ আজকাল সউদী ওহাবী ইহুদীদের মদদপুষ্ট খারিজী, রাফিজী, সালাফী, ওহাবী গং কুরআন শরীফ-এর এই আয়াত শরীফ-এর মনগড়া ব্যাখ্যা করে তাদের বানানো নিয়মে মাস শুরু করে যাচ্ছে। আরবী মাসের ২৯তম তারিখে চাঁদ তালাশ করা এবং কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করা শরীয়তের নির্দেশ। এছাড়াও হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা শুরু কর এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর।”
সউদী ওহাবী সরকারের বানানো মনগড়া ক্যালেন্ডারের অনুসরণের কারণে প্রতি বছর হজ্জ বাতিল হচ্ছে, রোযা নষ্ট হচ্ছে, ঈদ বাতিল হচ্ছে। সউদী আরব ছাড়াও অনেক মুসলিম দেশেও চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু হচ্ছেনা। চাঁদের তারিখ হের-ফের করে সহজেই মুসলমানদের আমল নষ্ট করা যায়। তাই মুনাফিকদের সাথে নিয়ে কাফির-মুশরিকরা সারা বিশ্বে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করার শরীয়তের পদ্ধতির পরিবর্তে তাদের বানানো পদ্ধতি চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে সউদি ওহাবি ইহুদী সম্প্রদায়।এ ব্যাপারে এখনও বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশের মুসলমানগণ উদাসীন।
৫) আমাদের কি করণীয়
চাঁদ বিষয়ে দৈনিক আল ইহসান শরীফ এবং আল বাইয়্যিনাত শরীফে চাঁদ বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয় সেগুলো পাঠ করা এবং মজলিশে আলোচনা করা।
সউদি ওহাবী ষড়যন্ত্রের বিষয়টি নিজে ভাল ভাবে জানা এবং মানুষকে জানানো।
এই বিষয়ে সিডি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করা, দেখা এবং বোঝার চেস্টা করা।
৬) রুইয়াতিল হিলাল মজলিশের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে এর কার্যক্রমকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায়।
আপনাদের সকলের উচিত রুইয়াতিল হিলাল মজলিশের একজন সম্মানিত সদস্য হওয়া। প্রতি মাসে চাঁদ তালাশ করে কেন্দ্রীয়ভাবে জানানো।