গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, দৈনিক আল ইহসান শরীফ এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনাদের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক- খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরী‘য়াহ ওয়াত তরীক্বাহ, কুতুবুল ‘আলম, আল গউছুল আ’যম, সুলত্বানুল আউলিয়া, মাখযানুল মা’রিফাহ, খযীনাতুর রহমাহ, মুঈনুল মিল্লাহ, লিসানুল উম্মাহ, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, হাকিমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, মুহ্ইউস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াহ, ছাহিবুল ইলহাম, রসূলে নুমা, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, সুলত্বানুল ‘আরিফীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আল্ক্বাব, সাইয়্যিদু আওলাদু রসূলিল্লাহ, মাওলানা- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাইশী ওয়াল হানাফী ওয়াল ক্বাদিরী ওয়াল চীশতী ওয়ান নক্শবন্দী ওয়াল মুজাদ্দিদী ওয়াল মুহম্মদী
যিলহজ ১৪২৭ হিজরী (জানুয়ারী ২০০৫ ঈসায়ী সাল)
মহান আল্লাহ পাক উনার অসাধারণ এক হিকমতময় সৃষ্টি হচ্ছে চাঁদ। মুসলমান উনাদের ইবাদত-বন্দেগীর সাথে চাঁদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন- “ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার নিকট মানুষেরা চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে, আপনি বলে দিন, চাঁদ হচ্ছে মানুষের জন্য ইবাদত উনার সময় নির্ধারক এবং সম্মানিত হজ্জ উনার সময় ঠিক করার মাধ্যম।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮৯)
আখিরি রসুল, হাবিবুল্লাহ, হুজুর-পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খালি চোখে চাঁদ দেখে (কোনও অপটিকাল শক্তিবৃদ্ধি না করে) মাস শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ১৭৪)
কিন্তু আমরা প্রত্যেক হিজরী মাসের বিশৃঙ্খলার মুখোমুখি হই। কেউ অন্ধভাবে সৌদি আরবকে অনুসরণ করতে পছন্দ করেন আবার কেউ স্থানীয় দর্শনে বিশ্বাসী। আবার কেও একদিনে সারাবিশ্বে ঈদ পালনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৫ম স্তম্ভ হচ্ছে হজ্জ।সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার চাঁদের তারিখ পরিবর্তন করার মাধ্যমে ১৩৬৭ হিজরী (১৯৪৮ ঈসায়ী) সাল থেকে সেই সম্মানিত হজ্জ নষ্ট করে আসতেছে। (নাউযুবিল্লাহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ মুতাবিক প্রতি মাসেই ২৯তম দিন শেষে আকাশে খালি চোখে চাঁদ দেখে মাস শুরু করতে হয়। কিন্তু অনেক নামধারী মুসলিম দেশ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুসরণ না করে মনগড়াভাবে চাঁদের তারিখ ঘোষণা করছে।
গভীরভাবে তলিয়ে দেখার পর জানা গেল- এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্য হোতা হচ্ছে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুসরণ না করে অর্থাৎ খালি চোখে চাঁদ দেখার চেষ্টা না করে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার এ পর্যন্ত ৪টি মনগড়া পদ্ধতি অবলম্বন করেছে-
১) প্রথম মনগড়া পদ্ধতি (১৯৫০-১৯৭২ ঈসায়ী): সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার ৯ডিগ্রী উপরে অবস্থান করলে মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার ৯ডিগ্রী উপরে অবস্থান করলেই আরবী মাস শুরু করা যায় না। চাঁদ শুধু ৯ডিগ্রী নয়; তারচেয়ে বেশি উচ্চতায় থাকলেও দৃশ্যমান নাও হতে পারে। সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী চাঁদ তালাশ করতে হবে এবং মাস শুরু করার জন্য খালি চোখে চাঁদ দেখতে হবে।
২) দ্বিতীয় মনগড়া পদ্ধতি (১৯৭৩-১৯৯৮ ঈসায়ী): মধ্য রাতের পূর্বে অমাবস্যা সংঘটিত হলে পরের দিন থেকে নতুন মাস শুরু করতো। আবার সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টার বেশি হলে নতুন মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ মহাকাশ বিজ্ঞানের তথ্যানুযায়ী ২৯তম দিন শেষে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স হলো ১৭ ঘন্টা থেকে ২৩ ঘণ্টা, এর পূর্বে চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে আসে না।
৩) তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতি (১৯৯৮/৯৯-২০০১ ঈসায়ী): সূর্যাস্তের ১ মিনিট পরেও চন্দ্র অস্ত গেলে নতুন মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সূর্যাস্তের পরে অমাবস্যার চাঁদও অস্ত যেতে পারে, তখন কোনভাবেই নতুন মাস শুরু হতে পারে না। আর যদি নতুন চাঁদও অস্ত যায়, সে সময় উক্ত চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে আসতে পারে না, ফলে নতুন মাস কোনভাবেই গণনা সম্ভব নয়।
৪) চতুর্থ মনগড়া পদ্ধতি (২০০৩ ঈসায়ী-বর্তমান সময় পর্যন্ত): যদি সূর্যাস্তের পর চন্দ্র অস্ত যায় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে অমাবস্যা সংঘটিত হয়, তবে পরের দিন থেকে নতুন মাস শুরু করে। নাঊযুবিল্লাহ!
সউদী আরব, যে দেশের দিকে তাকিয়ে থাকে সমস্ত মুসলিম বিশ্ব তাদের ক্যালেন্ডার রচনা করার কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ‘উম্মুল কুরা’। এই উম্মুল কুরা চাঁদ দেখে আরবী মাস গণনা না করে একটি নিজস্ব পদ্ধতি তৈরি করে নিয়ে সে অনুযায়ী মাস গণনা করে যাচ্ছে। অনেকের পক্ষেই বিষয়টি গ্রহণ করা কঠিন হলেও এটা সত্য সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে সঠিক তারিখে মাস গণনা না করার কারণে পবিত্র হজ্জসহ মুসলমানদের অনেক আমল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রতিবাদ করার কেউ নেই।
চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা নিয়ে সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে বেশ কিছু মাসয়ালা-মাসায়িল আলোচনা হয়েছে। তবে সকল আলোচনাই হচ্ছে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা এবং কোন মাসে কতজন দেখলে তা গ্রহণযোগ্য হবে সেসব প্রসঙ্গে। চাঁদের আলোচনায় কোন জটিলতা স্থান পায়নি। এর কারণ চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বা কেউ তা পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করতে পারে তা পূর্ববর্তী মানুষের অনুভূতিতেও জন্ম নেয়নি।
কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো চাঁদের তারিখ একদিন হের-ফের করলেই মুসলমানদের অনেক আমল যেমন পবিত্র হজ্জ, পবিত্র ঈদ, বিশেষ দিন এবং রাতসমূহ যেমন পবিত্র শবে বরাত শরীফ, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ, পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ, পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ, পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ ইত্যাদি মহান দিন এবং রাত্রিগুলোর ফযীলত থেকে বিরত রাখা যায়। সে কারণেই কাফির-মুশরিকরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু নামধারী মুসলমান মুনাফিক শাসকগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে সেই বিভ্রান্তি সারা পৃথিবীর মুসলমান দেশসমূহে ছড়িয়ে দিচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ প্রতিবাদ করার কেউ নেই।
পনের শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম ঢাকা রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তাদের ষড়যন্ত্রের এই মুখোশ উন্মোচন এবং সারা বিশ্বের মুসলমান উনাদেরকে সচেতন করার লক্ষ্যে চাঁদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, লেখা-লেখি, ওয়াজ-নছীহত করেন। এর পর ১৪২৭ হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি এবং নাম দেন “আন্তর্জাতিক রু’ইয়াতে হিলাল মজলিস”।
মুসলমান উনাদের মাঝে চাঁদ তালাশের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং সেই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য চাঁদ দেখার জন্য অঞ্চল ভিত্তিক কমিটি প্রতিষ্ঠা করা এবং সঠিক তারিখে মাস শুরু করে সমগ্র বিশ্বের মুসলমান উনাদের আমল পালন করার সুযোগ সৃস্টি করে দেয়া। সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহপাক ঘোষণা মুবারক করেছেন “অবশ্যই নাসি বা হিজরী মাসকে এগিয়ে বা পিছিয়ে নেয়া, কুফরীকে বাড়িয়ে দেয়”।(সূরা তওবা)। এর অর্থ হচ্ছে হিজরী মাস এবং তারিখকে সামনের দিকে বা পিছনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া চরম কুফরী ও হারাম, বর্তমানে বহু তথাকথিত মুসলমান সরকার সহ সউদি ইহুদী সরকার চাঁদের তারিখ হেরফের করছে এমনকি পবিত্র হজ্জের তারিখ পরিবর্তন করে বিশ্বের সকল মুসলমান উনাদের হজ্জ নস্ট করে দিচ্ছে।
তাই আমরা চাই………
১) সঠিক তারিখে চাঁদ তালাশের আয়োজন করা।
২) খালি চোখে চাঁদ দেখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩) নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে চাঁদ দেখার তথ্য সংগ্রহ করা
৪) নির্ভরযোগ্য চাঁদ দেখা গবেষণা মজলিস প্রতিষ্ঠা করা।
৫) চাঁদ দেখার উপর সিলেবাস রচনা করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জারী করা।
৬) চাঁদ বিষয়ক মহাকাশবিজ্ঞান কে মুসলমানদের সামনে সুশৃঙ্খল ভাবে তুলে ধরা।
৭) প্রতি ইসলামী মাসের প্রথম দিন বিশ্বজুড়ে মানুষকে অবহিত করা যাতে তারা এ মাসের সাথে সম্পর্কিত ইবাদত বন্দেগী সঠিকভাবে পালন করতে পারে।
৮) সম্মানিত ইসলাম উনার সঠিক বিশ্বাস ও আমল শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা।
মুসলিম দেশগুলোতে চাঁদ দেখার সুন্নতী পদ্ধতি বাদ দিয়ে মনগড়া নিয়মে মাস গণনা হচ্ছে। আমাদের দেশেও আরবী মাস শুরু নিয়ে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিশেষ একটি গোষ্ঠী। সামগ্রিকভাবে সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে দেশের মুসলমানদের আমলের সুবিধার্থে আরবী মাসের সঠিক তারিখ জানাবার উদ্দেশ্যে এই আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি ‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ গঠন করা হয়েছে। ১৪২৭ হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রু’ইয়াতে হিলাল মজলিসের কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই মজলিসের কার্যক্রম বিস্তৃত রয়েছে।
রু’ইয়াতে হিলাল মজলিস কৃর্তক গৃহীত কার্যক্রম এখানে তুলে ধরা হলো-
১। রুইয়াতে হিলাল মজলিস শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে চাঁদ দেখার প্রতিবেদন সংগ্রহ করে। বাইনোকুলার এবং টেলিস্কোপে চাঁদ দেখার প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয় না।
২। দেশের ৬৪টি জেলায় রুইয়াতে হিলাল মজলিসের প্রতিনিধি রয়েছেন যারা সম্মানিত শরীয়ত উনার পাবন্দ।
৩। রুইয়াতে হিলাল মজলিস বিভিন্নভাবে লেখা এবং ই-মেইলের মাধ্যমে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছে ও করছে।
৪। আন্তর্জাতিক কমিটি হওয়াতে বিদেশী সদস্যদের প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয় এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
৫। পবিত্র রমাদ্বান শরীফ-এ আলাদা সময় সূচি প্রকাশ করতে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
৬। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার দিন-তারিখ বিশ্লেষণ করার কার্যক্রম নিয়ে থাকে।
৭। মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে চাঁদের উপর বিভিন্ন প্রকাশনা প্রকাশ করা হয়েছে এবং কার্যক্রম চলছে।
৮। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে চাঁদ বিষয়ে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।
৯। প্রামাণ্য চিত্রসহ চাঁদ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং হতে থাকবে।
১০। বিভিন্ন দেশের সরকারের মাস গণনার পদ্ধতির ত্রুটির উপর প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে।