পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুসরণ না করে অর্থাৎ খালি চোখে চাঁদ দেখার চেষ্টা না করে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার এ পর্যন্ত ৪টি মনগড়া পদ্ধতি অবলম্বন করেছে-
১) প্রথম মনগড়া পদ্ধতি (১৯৫০-১৯৭২ ঈসায়ী) : সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার ৯ উপরে অবস্থান করলে মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার ৯ উপরে অবস্থান করলেই আরবী মাস শুরু করা যায় না। চাঁদ শুধু ৯ নয়; তারচেয়ে বেশি উচ্চতায় থাকলেও দৃশ্যমান নাও হতে পারে। সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী চাঁদ তালাশ করতে হবে এবং মাস শুরু করার জন্য খালি চোখে চাঁদ দেখতে হবে।
২) দ্বিতীয় মনগড়া পদ্ধতি (১৯৭৩-১৯৯৮ ঈসায়ী) : মধ্য রাতের পূর্বে অমাবস্যা সংঘটিত হলে পরের দিন থেকে নতুন মাস শুরু করতো। আবার সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টার বেশি হলে নতুন মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ মহাকাশ বিজ্ঞানের তথ্যানুযায়ী ২৯তম দিন শেষে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স হলো ১৭ ঘন্টা থেকে ২৩ ঘণ্টা, এর পূর্বে চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে আসে না।
৩) তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতি (১৯৯৮/৯৯-২০০১ ঈসায়ী) : সূর্যাস্তের ১ মিনিট পরেও চন্দ্র অস্ত গেলে নতুন মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সূর্যাস্তের পরে অমাবস্যার চাঁদও অস্ত যেতে পারে, তখন কোনভাবেই নতুন মাস শুরু হতে পারে না। আর যদি নতুন চাঁদও অস্ত যায়, সে সময় উক্ত চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে নাও আসতে পারে, ফলে নতুন মাস কোনভাবেই গণনা সম্ভব নয়।
৪) চতুর্থ মনগড়া পদ্ধতি (২০০৩ ঈসায়ী-বর্তমান সময় পর্যন্ত) : যদি সূর্যাস্তের পর চন্দ্র অস্ত যায় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে অমাবস্যা সংঘটিত হয়, তবে পরের দিন থেকে নতুন মাস শুরু করে। নাঊযুবিল্লাহ!
চাঁদ যদি সূর্যাস্তের পর অস্ত যায় এবং অমাবস্যা যদি সূর্যাস্তের পূর্বেই সংঘটিত হয়, তারপরও চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে নাও আসতে পারে। কেননা উপরের কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেই আরবী মাস শুরু করা সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্দেশ নয় বরং সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী চাঁদ খালি চোখে দেখে মাস শুরু করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে সমাজে তিন শ্রেণীর লোক দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে। এক শ্রেণীর লোক স্বাভাবিকভাবেই উপরোক্ত আলোচনা বিশ্বাস করবেন, যাদের পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার জ্ঞান আছে এবং যারা সউদী ওহাবী ইহুদীদের অন্যান্য অপকর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন।
অন্য এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা উপরোক্ত আলোচনা বিশ্বাস করার জন্য দলীল চাইবে। অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনার সত্যতার প্রমাণ চাইবে।
আরেক গ-মূর্খ শ্রেণী রয়েছে, যারা বলবে সউদী আরব কি কম বুঝে? সেখানে কি আলিম-উলামা নেই, মহাকাশ বিজ্ঞানী নেই? এই শ্রেণী সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারের অপকর্মগুলোকে নানা ভ্রান্ত যুক্তি দাঁড় করিয়ে হলেও বিশ্বাস করতে চায়।
দ্বিতীয় মনগড়া পদ্ধতিতে মাস গণনার প্রমাণ : অনেকেই মনে করে থাকে যে, সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার হয়তো চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করে, আসলে তা নয়। বিগত বছরগুলোতে মহাকাশ বিজ্ঞানীসহ সাধারণ মানুষের কাছে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, যদি খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করাকে বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার সঠিক তারিখে আরবী মাস শুরু করেনি।
চিত্র : “মাজলিশ-আল-ইফতা আল আ’লা” কর্তৃক জর্দান মহাকাশ বিষয়ক সংস্থাকে প্রেরিত টেলিগ্রামের নমুনা
ঘটনাক্রমে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কাউন্সিল “মাজলিশ-আল-ইফতা আল আ’লা” থেকে জর্দান মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা একটি টেলিগ্রাম পায়, যাতে ধরা পড়ে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করে না; বরং তাদের নিজস্ব মনগড়া নিয়ম অনুযায়ী আরবী মাস ঘোষণা করে। তাদের এই মনগড়া নিয়ম হচ্ছে সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টার বেশি হলে নতুন আরবী মাস শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবে কোনোদিন এই নিয়মে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা সম্ভব নয়। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাদের এই মনগড়া নিয়ম বলবৎ ছিল।
তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতিতে মাস গণনার প্রমাণ : সাধারণত অমাবস্যার পর নতুন চাঁদের জন্ম হয়। সেই নতুন চাঁদ যখন পশ্চিমাকাশে খালি চোখে দেখা যায়, তখন নতুন আরবী মাস গণনা শুরু হয় আর চাঁদ দেখা না গেলে পুরানো মাস ত্রিশ দিনে গণনা করা হয়।
চিত্র : সউদী শূরা কাউন্সিলের বর্ণিত মনগড়া নিয়মের চিত্রিক নমুনা
সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার ১৯৯৯ সাল থেকে আরবী মাস গণনার ক্ষেত্রে তৃতীয় মনগড়া নিয়ম চালু করে, যা ২০০১ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল। এই মনগড়া নিয়মে বলা হয়- মাসের ২৯তম দিনে যদি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আকাশে সূর্যাস্তের পরে চাঁদ অস্ত যায়, তবেই নতুন মাস শুরু হবে। এই নতুন মনগড়া নিয়মেও খালি চোখে চাঁদ দেখে মাস শুরু করাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আর মহাকাশ বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী, চাঁদ অমাবস্যাতে পৌঁছানোর পূর্বেও এমন হতে পারে যে সূর্যাস্তের পরেই চাঁদ অস্ত যাবে। অর্থাৎ শুধু সূর্যাস্তের পরে চাঁদ অস্ত যাওয়ার বিষয় বিবেচনা করে মাস শুরু করা অর্থহীন।
সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার কর্তৃক দ্বিতীয় মনগড়া পদ্ধতি রহিত করে তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতি চালু করার কারণে তাদের নিজেদের ক্যালেন্ডারেই দুই রকম তারিখ পরিলক্ষিত হয়। ১৯৯৯ সালে যখন তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতি চালু করে, তখন তাদের পূর্ববর্তী অর্থাৎ দ্বিতীয় মনগড়া পদ্ধতিতে রচিত (যা ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়েছে) ক্যালেন্ডারে ১৪২০ হিজরী সনের পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার পহেলা তারিখ উল্লেখ আছে ৮ ডিসেম্বর। আর নতুন নিয়মে বা তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতিতে রচিত (যা ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অনুসরণ করা হয়েছে) ক্যালেন্ডারে ১৪২০ হিজরী সনের পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার পহেলা তারিখ উল্লেখ আছে ৯ ডিসেম্বর।
অর্থাৎ একই বছরের (১৪২০ হিজরী সনের) পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার পহেলা তারিখ পুরাতন বা দ্বিতীয় মনগড়া পদ্ধতিতে ৮ ডিসেম্বর আর নতুন বা তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতিতে ৯ ডিসেম্বর উল্লেখ আছে।
অথচ দুটো তারিখই ভুল। চাঁদের সঠিক হিসাব অনুযায়ী ওই বছর পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার প্রথম তারিখ শুরু করা উচিত ছিল ১০ ডিসেম্বর।
চিত্র : সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার কর্তৃক দুইটি আলাদা মনগড়া পদ্ধতিতে রচিত ১৪২০ হিজরী সনের পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার ক্যালেন্ডারের দুইটি পাতা
উপরের ডান দিকের ছবিতে দেয়া আছে- ১৪২০ হিজরী সনের পহেলা রমাদ্বান শরীফ ৮ ডিসেম্বর আর বাঁয়ের ছবিতে দেয়া আছে ১৪২০ হিজরী সনের পহেলা রমাদ্বান শরীফ ৯ ডিসেম্বর।
চতুর্থ মনগড়া পদ্ধতিতে মাস গণনার প্রমাণ : ২০০৩ ঈসায়ী (১৪২৩ হিজরী) থেকে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার নতুন বানানো একটি নিয়মে অর্থাৎ চতুর্থ মনগড়া পদ্ধতিতে আরবী মাস গণনা করে যাচ্ছে। তাদের উম্মুল কুরার প্রশাসনিক ওয়েব সাইটে পদ্ধতিটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে যে-
১. যদি সূর্যাস্তের পূর্বে জিওসেন্ট্রিক অমাবস্যা সংঘটিত হয়,
২. আর সূর্যাস্তের পর চন্দ্রাস্ত হয়,
তাহলে পরের দিন থেকে নতুন মাসের প্রথম দিন শুরু হবে।
চিত্র : উম্মুল কুরার প্রশাসনিক ওয়েব সাইটে বর্ণিত চতুর্থ মনগড়া পদ্ধতির শর্তদ্বয়
লক্ষ্যণীয় যে, এ পদ্ধতিতেও খালি চোখে চাঁদ দেখাকে উপেক্ষা করা হয়েছে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারের চাঁদ নিয়ে ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সমাজে তিন শ্রেণীর লোক পরিলক্ষিত হয়। এক শ্রেণীর লোক যাদের চাঁদ বিষয়ক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার জ্ঞান রয়েছে এবং সউদী ওহাবী ইহুদীদের অন্যান্য অপকর্ম সম্পর্কে উনারা জ্ঞাত আছেন। দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন করায় স্বাভাবিকভাবেই উনাদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে আশা করা যায়।
দ্বিতীয় শ্রেণীর যারা দলীল-প্রমাণ তলব করে থাকে তাদের জন্য যথেষ্ট ণ দলীল-প্রমাণ ইতোমধ্যে উপস্থাপিত হয়েছে এবং সামনে আরো হবে।
তৃতীয় শ্রেণী যারা চিন্তা-ভাবনা করে থাকে যে, সউদী সরকার কি কম বুঝে? সেখানে কি আলিম-উলামা নেই, মহাকাশ বিজ্ঞানী নেই? তাদের জ্ঞাতার্থে বলতে হয়- উপরোক্ত তথ্যগুলো সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকেই এসেছে। আর পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খিলাফ করে কোনো নামধারী আলিম-উলামার মনগড়া ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার নাম দিয়ে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোন কাজ করলেই তা ইসলামী কাজ বা সম্মানিত শরীয়ত সমর্থিত কাজ হয়না। সম্মানিত শরীয়ত উনার জায়িয কাজগুলোর পেছনে থাকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সমর্থন। আর যখন কোন ব্যক্তি বা কোন কর্তৃপক্ষের কাজ সম্মানিত শরীয়ত উনার সমর্থন হারায় অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে জায়িয প্রমাণিত হয় না, তখন অবশ্যই বলতে হবে যে, তার বা তাদের কাজগুলো নফস্ বা কুপ্রবৃত্তি দ্বারা প্ররোচিত এবং কোন উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটিত। সেখানে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক নেই বরং রয়েছে ইবলীস ও তার সহযোগি ইহুদী-নাছারাদের মনতুষ্টি।
সুতরাং সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী খালি চোখে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা শর্তকে উপেক্ষা করে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার যত পদ্ধতিই তৈরি করুক না কেন, সে অনুযায়ী আরবী মাস শুরু করলে মুসলমান উনাদের পবিত্র হজ্জ, রোযাসহ সম্মানিত শরীয়ত উনার অনেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং যাচ্ছে। আর উক্ত মনগড়া নিয়মে আরবী মাস গণনা করায় সে দেশসহ অনুসারী সবার সমস্ত আমল নষ্টের দায়-দায়িত্ব সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারকেই নিতে হবে।