আন্তর্জাতিক মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল
১৬ শাওওয়াল শরীফ ১৪৪৫ হিজরী

দর্শকঃ হযরত ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইত্তেহাদুল মাতলার যে ব্যাখ্যা পেলাম অর্থাৎ ৩ দিন ৩ রাতের পথ অতিক্রম করলে হয় মুসাফির এবং তা  দুরত্বে ৫৪ মাইল। তাহলে ১ দিন ১ রাতের পথ সমান ১৮ মাইল। ৩০ দিনে মোট দূরত্ব হয় ১৮x৩০ = ৫৪০ মাইল (ফতওয়ায়ে শামী) অর্থাৎ এক উদয়স্থলের মধ্যে দূরত্ব ৫৪০ মাইল। চাঁদ দেখা গেলে এই সীমানার মধ্যে সকলে আরবী মাস শুরু করবে। আর এটিই হচ্ছে  ইত্তেহাদুল মাতলার ব্যাখ্যা। এখন বর্তমানে একজন মুসাফির ১ দিনে ১ রাতে প্রায় বিশ্ব পরিভ্রমন করতে পারে তাহলে মাস শুরুর ক্ষেত্রে কিভাবে  বিজ্ঞান সম্মতভাবে ৫৪০ মাইলের ব্যাখ্যা করতে পারে এ বিষয়ে একটু জানালে খুশী হতাম।

চাঁদ গবেষকঃ আসলে খিলাফত ব্যবস্থা থাকলে এই হিসাব নির্ণয় করা খুব সহজ। তবু বোঝার জন্য আজ এখানে একটি ক্যাল্কুলেশন নীচে দেয়া হল।

১) বিষুবরেখার কাছে পৃথিবীর দূরত্ব  প্রায় ২৫০০০ মাইল ( সূক্ষ্য হিসেবে ২৪৮৬০ মাইল)

পৃথিবীকে ভাগ করা হয়েছে ১৫ ডিগ্রী পর পর একটি সময় অঞ্চলে অর্থাৎ মোট ২৪ টি দ্রাঘিমা রেখাতে।

তাহলে বিষুবরেখার কাছে প্রতি ১৫ ডিগ্রী দ্রাঘিমাতে দূরত্ব ২৫০০০/২৪= ১০৪১.৬৬ মাইল

তাহলে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমাতে দূরত্ব ১০৪১.৬৬/১৫= ৬৯.৪৪ মাইল। ( বা মনে রাখতে গড়ে ৭০ মাইল)

ক) তাহলে ০ ডিগ্রী অক্ষাংশে এবং ০ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশে
(অর্থাৎ বিষুব রেখার কাছে) পৃথিবীর দূরত্ব ৬৯.৪৪ মাইল । তাহলে বিষুবরেখার কাছে ৫৪০ মাইল এলাকা পেতে প্রয়োজন ৮ ডিগ্রী।
৬৯.৪৪x৮=৫৫৫  মাইল

খ) ১০ ডিগ্রী অক্ষাংশে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমাতে দূরত্ব  ৬৯ মাইল। তাহলে সেখানে ৫৪০ মাইল এলাকা পেতে প্রয়োজন ৮ ডিগ্রী।

৬৯X৮=৫৫২ মাইল

গ) ২০ ডিগ্রী অক্ষাংশে প্রতি ডিগ্রীতে দ্রাঘিমাতে দূরত্ব ৬৫ মাইল। তাহলে সেখানে ৫৪০ মাইল এলাকা পেতে প্রয়োজন ৮.৫ ডিগ্রী।

৬৫X৮.৫=৫৫২ মাইল

ঘ) ৩০ ডিগ্রী অক্ষাংশে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমাতে দূরত্ব ৬০ মাইল। তাহলে সেখানে ৫৪০ মাইল এলাকা পেতে প্রয়োজন ৯ ডিগ্রী।

৬০X৯ =৫৪০ মাইল

ঙ) ৪০ ডিগ্রী অক্ষাংশে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমাতে দূরত্ব ৫৩ মাইল। তাহলে সেখানে ৫৪০ মাইল এলাকা পেতে প্রয়োজন ৯.২৫ ডিগ্রী।

৫৩X১০.৫=৫৫৬.৫ মাইল

চ) ৫০ ডিগ্রী অক্ষাংশে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমাতে দূরত্ব ৪৫ মাইল। তাহলে সেখানে ৫৪০ মাইল এলাকা পেতে প্রয়োজন ১২ ডিগ্রী।

৪৫X ১২=৫৪০ মাইল

ছ) ৬০ ডিগ্রী অক্ষাংশে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমাতে দূরত্ব ৩৫ মাইল। তাহলে সেখানে  ৫৪০ মাইল এলাকা পেতে প্রয়োজন ১৫.৫ ডিগ্রী।

৩৫X ১৫.৫ =৫৪২ মাইল

২) আবার উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুর দূরত্ব (যদি একটি পাখী উড়ে আসে ) ১২৪১৬ মাইল

বিষুবরেখা হচ্ছে ০ ডিগ্রী। বিষুবরেখা থেকে উত্তরমেরু ৯০ ডিগ্রী, আবার বিষুবরেখা থেকে দক্ষিণমেরু ৯০ ডিগ্রী। তাহলে বিষুব রেখা থেকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু হচ্ছে ১২৪১৬/২=৬৮৯৭ মাইল

তাহলে প্রতি ডিগ্রী অক্ষাংশ পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে (উত্তর-দক্ষিণ দিকে) ৬৮৯৭/৯০=৬৮.৯৭ মাইল।

তাহলে ৮ ডিগ্রী অক্ষাংশ পর্যন্ত দূরত্ব হচ্ছে ৬৮.৯৭ X ৮= ৫৫১.৭৬ মাইল

তাহলে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি বিষুবরেখার কাছে কোন দেশে চাঁদ দেখা গেলে তার ৮ ডিগ্রী দ্রাঘিমা ও ৪ ডিগ্রী উপরে- নীচে এলাকা জুড়ে আরবী মাস শুরু করতে পারবে। কিন্তু যেহেতু চাঁদ পশ্চিমে যেতে থাকে ফলে দৃশ্যমান এলাকার বিস্তৃতি বাড়তেই থাকে। এটা কেবল প্রয়োজন যখন কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার হবে ।

আবার আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি ৬০ ডিগ্রী দ্রাঘিমার কাছাকাছি দেশগুলোর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে তার ১৫.৫ ডিগ্রী দ্রাঘিমার দূরত্বের এলাকা জুড়ে আরবী মাস শুরু করতে পারবে।

যত উপরের অক্ষাংশে যাওয়া যাবে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরুর করার দ্রাঘিমা রেখার সংখ্যা  বাড়তে থাকবে কারণ পৃথিবীর উপরের অংশে এলাকা চেপে যেতে থাকে।