আন্তর্জাতিক মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল
২৩ রমাদ্বান শরীফ ১৪৪৬ হিজরী

সূর্যোদয় সূর্যাস্ত আকাশে বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তুর অবস্থান এই বিষয়গুলো হিসাব করা হয় গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে। এই সূত্রগুলো যখন ব্যবহার করতে হয় তখন কিছু বিষয় ধরে নিতে হয় অথবা ইনপুট হিসেবে স্থির করতে হয়।
যেমন কোন স্থানের অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ ঠিক করে নেওয়া। এই কাজ যদি কোন প্রমাণ বা স্ট্যান্ডার্ড জায়গা থেকে না নেওয়া হয় তাহলে দুজন ব্যক্তি এর জন্য খুব স্বাভাবিকভাবে খুব সামান্য হলেও দুই রকম হবে, এমনকি একজনকে একই দিনে অথবা কাছাকাছি সময়ে যদি করতে না দেওয়া হয় তাহলেও দেখা যাবে দুটো ভিন্ন মান স্থির করা হয়েছে, চেঞ্জ খুব সামান্য হলেও । কারণ প্রমাণ অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ ডিগ্রি মিনিট সেকেন্ড পর্যন্ত সরকারি বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্থির করা হয়নি।
আবার এই মানগুলো প্রবেশ করানোর পর গাণিতিক আউটপুট সেকেন্ড পর্যন্ত না নিলে একটি error সবসময় রয়েই যাবে। এছাড়া বাতাসের রিফ্রাক্টিভ ইনডেক্স, টেম্পারেচার, বাতাসের চাপ ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা এসব বিষয়কে ধরে নিতে হয়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মান চেঞ্জ এর জন্য কিছু সংখ্যক হলেও আউটপুট মানে চেঞ্জ আসবে । এতক্ষণ আমরা যারা হিসাব দিচ্ছেন তাদের সমস্যার ক্ষেত্র গুলো উপস্থাপন করলাম।

এবার আমরা দেখব ব্যবহারকারীর দিক থেকে, ব্যবহারকারীরা সবাই কখনোই গণনাকারীর ব্যবহৃত অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে গিয়ে অবস্থান করেন না। অর্থাৎ দুটি স্থানের পার্থক্যের দরুন অল্প হলেও সময়ের পার্থক্য ঘটবে। যেমন আগে ঢাকা শহরের বিস্তৃতি অল্প ছিল এখন অনেক বিস্তৃত হয়েছে সে হিসেবে ঢাকার জিরো পয়েন্ট এবং উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এর মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য থাকবে । এছাড়া এখন অলটিটিউড বা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার বিষয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে , শহরে অনেক হাই রাইস বিল্ডিং হয়েছে প্রতি তলার জন্য ৩ মিটার পরিবর্তন হচ্ছে তাহলে এখানেও আমরা কিছু পরিমাণ হলেও পার্থক্য দেখব একই বিল্ডিং এর নিচ তলায় এবং ৩০ তলার বাসিন্দার মধ্যে।
এছাড়া ব্যবহারকারী ওনারা বিভিন্ন লেভেলের হয়ে থাকবেন কেউ ইন্টারনেট এ ব্যবহৃত সময় ব্যবহার করবেন কেউ মসজিদের আজান শুনে ইফতারি গ্রহণ করবেন, কেউ রেডিও ও টিভির আজান শুনে ইফতারি গ্রহণ করবেন আবার কেউ তার রুমে টাঙানো দেয়াল ঘড়ি বা হাত ঘড়ি ব্যবহার করবেন।
এই সময় রিডিং ডিভাইস গুলোর মধ্যেও যথেষ্ট পরিমাণে এরর তৈরি হয় সময়ের সাথে সাথে। বিশেষ করে দেয়াল ঘড়ি , হাত ঘড়ি এগুলোর ক্লক অসিলেটর সস্তা কোয়ার্টজ এর তৈরি বিধায় বছরে মিনিট খানেক পর্যন্ত error তৈরি করে।
এতকিছু বিষয়ের সূক্ষ্মতা সবসময় বজায় রাখা সম্ভব নয় বিধায় সবসময়ই সতর্কতামূলক কিছু সময় রাখতেই হবে এবং আবহমানকাল থেকে এর চর্চা আমাদের বাংলাদেশে ব্যবহার হয়ে আসছে।

আর প্রশ্নটা যদি নামাজের ওয়াক্তের ক্ষেত্রে হতো তাহলে তেমন কোন ঝামেলার নেই কারণ নামাজ শুরু করার আগে আজান দেওয়া হয় তারপর নামাজ শুরু হয় কিন্তু সিয়াম বা রোজা এর ক্ষেত্রে ইফতারির ক্ষেত্রে এখানে অন্য কোন বিষয় নেই তাই সারাদিনের রোজা নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে এখন যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে যে সময়সূচী প্রকাশ করা হবে সেখানে এ বিষয়গুলো বিবেচনা না করা হলে সাধারণ মানুষের ভুল ভ্রান্তি ঘটবে রোজা নষ্ট হবে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এটা সার্কুলেশনের জন্য তাদের দায়ভার নিতে হবে । আমরা চাই না কারো রোজা সময়ের আগেই ভেঙে যাক বা নষ্ট হোক তাই উম্মতে মোহাম্মদী সাহায্যার্থে অবশ্যই আমাদেরকে বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে হবে রাষ্ট্রীয় বা সামষ্টিক ক্ষেত্রে এই সময়ে অবশ্যই সতর্কতামূলক সময় যোগ করতে হবে । কেউ যদি পার্সোনালি বা ব্যক্তিগতভাবে তাহাকিক করে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করে সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু সামস্টিক ভাবে অবশ্যই সতর্কতামূলক সময় থাকতেই হবে।

আমরা যদি লক্ষ্য করি কোন বিষয়ের কারণে আমরা সাথে সাথে ইফতার করার চেষ্টা করি। হাদীস শরীফে এসেছে তোমরা তাড়াতাড়ি রোজা ভাঙো। এর মানে আপনি ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড চিন্তা করলে হবে না কারণ আপনাকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার সময়ের অবস্থাটা মাথায় নিতে হবে, সে সময় কোন ঘড়ি ব্যবহৃত হতো না আকাশের অবস্থাটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। সাইয়্যিদুনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের থেকে খেলাফ করার জন্য দ্রুত করতে বলেছেন। এখন আমরা যদি দেখি ইহুদি ও মুশরেক খ্রিষ্টানরা ইফতার করে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আকাশ সম্পূর্ণ অন্ধকার হওয়ার পর অর্থাৎ সালাতুল ইশার ওয়াক্ত। তাই সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মাগরিবের সময় নিশ্চিত হওয়ার পরই দেরি না করে ইফতার করতে বলেছেন। আজকাল আমরা আমাদের ইফতারের সময়ের জন্য আকাশে দেখে স্থির করি না নিশ্চিত হই না, হই ঘড়ির কাঁটা দেখে গাণিতিক ক্যালকুলেশন গুলোর উপর বিশ্বাস করে কিন্তু গাণিতিক ক্যালকুলেশন এর মধ্যে যেসব ইনপুট ধরে নেওয়া হয় সেগুলো আমাদের মাথায় থাকে না । এছাড়া প্রত্যেকটি গাণিতিক ক্যালকুলেশন এরও কিছু লিমিটেশন বা সীমাবদ্ধতা থাকে সেটাকে বিবেচনা না করে আমরা গাণিতিক মানকে কোরআনিক মান হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই, এখানেই সমস্যা।

তাই অবশ্যই সতর্কতার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে এবং তা যোগ করে নতুন করে সাহারি ও ইফতারের সময়সূচি প্রণয়ন করতে হবে।
প্রকৌশলী মুহম্মদ ফাহিম রাছেখ
সচীব, আন্তর্জাতিক মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল