ঈদ বা রোজা শুরু করতে গিয়ে সউদি আরবের সাথে বাংলাদেশের ১ দিনের পার্থক্য থেকেই যাচ্ছে। এমনো অনেক বছর পার করেছি যখন ২ দিনেরও পার্থক্য হয়েছে। ফলে অনেকের মনেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে আসলে কে সঠিক? সউদী আরব নাকি বাংলাদেশ? কেউ কেউ আবার তথাকথিত বিজ্ঞানের প্রমাণ নিয়ে উপস্থিত হয়ে বোঝাতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ভুলের মধ্যেই আছে। তাদের সকলের জন্য আমাদের এই লেখা।
এই বিষয়টি আমরা প্রমাণ করবো
১) সম্মানিত শরীয়ত উনার আলোকে
২) আর সম্মানিত শরীয়ত উনার বিষয়টি স্পস্ট করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানের আলোকে শুরুতে কিছুটা আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
সূর্যের চারপাশে পৃথিবী বৃত্তাকার পথে নয় বরং উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে।
চাঁদও একটি উপবৃত্তাকার পথে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে।
পৃথিবী কখনো সূর্যের কাছে থাকে কখনো দূরে
চাঁদ কখনো পৃথিবীর কাছে থাকে কখনো দূরে
সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর গতি এবং পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের গতি অসম
পৃথিবীর কক্ষপথ বৃত্তাকর নয়। ফলে বছরে এর গতি কম বেশী হয়। জানুয়ারীতে পৃথিবী যখন সূর্যের কাছে থাকে তখন দূরত্ব থাকে প্রায় ১৪.৩০ কোটি কিলোমিটার আর গতি থাকে ৩০,৩০০ মি/সে আর যখন দূরে থাকে তখন দূরত্ব থাকে ১৫.২১ কোটি কিলোমিটার আর গতি থাকে ২৯,৩০০ মি/সে।
যখন চাঁদ পৃথিবীর কাছে থাকে তখন বেগ থাকে বেশী আর যখন দূরে থাকে তখন বেগ থাকে কম। কাছে অবস্থায় দূরত্ব থাকে ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার এবং গতি থাকে ১০৭৮.২ মি/সে এবং যখন দূরে থাকে তখন দূরত্ব হয় ৪ লক্ষ ০৫ হাজার ৪০০ কিলোমিটার এবং বেগ থাকে ৯৬৪.৬ মি/সে।
যদি এমন হত
- পৃথিবী সূর্যের চারপাশে একটি উপবৃত্তাকার পথে না ঘুরে বৃত্তাকার পথে ঘুরতো
- যদি চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে একটি উপবৃত্তাকার পথে না ঘুরে বৃত্তাকার পথে ঘুরতো
- যদি সূর্যের সাথে পৃথিবীর দূরত্ব কখনো কম-বেশী না হত
- যদি পৃথিবীর সাথে চাঁদের দূরত্ব কখনো কম-বেশী না হত
- যদি পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের ঘূর্ণনবেগ সব সময় নির্দিষ্ট থাকতো
- যদি পৃথিবী ও চাঁদ তার তলের সাথে বাঁকা না হয় সোজা হয়ে প্রদক্ষিণ করতো তাহলে একটি নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চল সব সময় আগে চাঁদ দেখতে পেতো। কিন্তু যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়মে তা সম্ভব নয় তাই নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চল কখনো আগে চাঁদ দেখতে পায় না এবং তা অসম্ভব।
ফলে উপরের আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবেঃ
১) বাঁকা চাঁদ পৃথিবীর যে কোন স্থানেই প্রথম দেখা যেতে পারে।
২) প্রতি মাসে বাঁকা চাঁদ একই দেশ থেকে দেখা যাবেনা।
৩) কোন নির্দিষ্ট দেশ সব সময় আগে চাঁদ দেখবে আর তার একদিন বা দুইদিন পর অন্যদেশ চাঁদ দেখবে এ ধারণাটি সঠিক নয়।
৪) পশ্চিমের দেশ আগে চাঁদ দেখবে এটি বিজ্ঞানসম্মত কথা নয় কেননা সকল দেশের পশ্চিমেই অন্য একটি দেশ আছে ।
৫) যদি শোনা যায় আমাদের দুদিন পূর্বে সউদী আরব চাঁদ দখেছে তবে সে দাবী মিথ্যা।
৬) যখন পৃথিবীর কোথাও সকাল তখন অন্যপ্রান্তে সন্ধ্যা ফলে একদিনে ঈদ পালন বা রোজা শুরু করা অসম্ভব।
৭) আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার দুইপাশে অবস্থিত দুটি দেশ ভিন্ন তারিখে ঈদ বা রোজা শুরু করবে। কিন্তু চাঁদ দেখা অনুযায়ী তারিখ ভিন্ন হলেও একইদিনে আর চাঁদ দেখা না গেলে ভিন্নদিনে পালন করতে পারে।
৮) কাছাকাছি অবস্থিত দুটি দেশেও একই তারিখে ঈদ পালন করা সবসময় সম্ভব নয় যহেতু আরবী মাস শুরু করা চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল।
৯) প্রতিমাসেই বাংলাদেশের পূর্বে সউদী আরব চাঁদ দেখবে এটি বিজ্ঞানসম্মত বিষয় নয়।
১০) সারা বিশ্বে একদিনে ঈদ করার বিষয়টি শরীয়ত ও বিজ্ঞানসম্মত নয়।
চাঁদ দেখা নিয়ে বিজ্ঞানের ভুল ব্যবহারঃ
বাজারে পাওয়া অনেক বইতে চাঁদ দেখা নিয়ে যখন বিজ্ঞান টেনে নিয়ে আসে তখন নীচের যুক্তিগুলো উপস্থাপন করে।
“যেহেতু চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে একটি প্রায় বৃত্তাকার পথে ঘুরছে ফলে চাঁদ কোন তারার সাপেক্ষে ২৭.৩ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে আগের জায়গায় ফিরে আসে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৩.২ ডিগ্রী ভ্রমন করে। তাহলে ঘন্টায় প্রায় ০.৫ ডিগ্রি ভ্রমন করে। এই হিসেবে অনেকে বলতে চান যদি কোন পূর্বাঞ্চলের দেশে চাঁদ দেখা যায় তবে তার কয়েক ঘন্টা পর চাঁদের আকৃতি আরও বড় হবে ফলে সেই পূর্বাঞ্চলীয় দেশের পশ্চিমের দেশ আরও ভালভাবে চাঁদ দেখবে।“
চাঁদ প্রতিদিন পৃথিবীর চারপাশে প্রায় ১৩ ডিগ্রী ভ্রমণ করে। এখানে চাঁদের গতিপথ বৃত্তাকার হিসেবে দেখিয়ে অঙ্কন করা হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে চাঁদের দৃশ্যমান হওয়াটা পৃথিবীর চারপাশে প্রতি ঘন্টায় এই ডিগ্রী বাড়ার উপর নির্ভরশীল নয়। সাথে রয়েছে আরও অনেক ফ্যাক্টর।
এখানে একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি পরিস্কার করার চেস্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
নীচের ছবিটি দেখুন। এটি ১৪৩৭ হিজরি সনের পবিত্র শাওওয়াল মাসের চাঁদের ভিজিবিলিটি কার্ভ। চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছিল বাংলাদেশের অনেক পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়াতে। তাহলে তার ৪ ঘন্টা পরে বাংলাদেশে সন্ধ্যা নামায় চাঁদ প্রতি ঘন্টায় ০.৫ ডিগ্রী হিসেবে ২ ডিগ্রী বেশী ভ্রমণ করেছিলো। অর্থাৎ সেই হিসেবে বাংলাদেশে আরও স্পষ্ট দেখা যাওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু বাস্তবে সেদিন বাংলাদেশে চাঁদ দৃশ্যমান হয়নি। কারণটা দেখুন।
অস্ট্রেলিয়াতে যখন চাঁদ দেখা গিয়েছিলো তখন চাঁদের কৌনিক দূরত্ব ছিল ১০ ডিগ্রী ৩৫ আর্ক মিনিট। দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতা ছিল ৯ ডিগ্রী ৩১ আর্ক মিনিট, লেগ টাইম (সূর্য অস্ত যাবার যত সময় পর চাঁদ অস্ত যায়) ৫৮ মিনিট এবং চাঁদের বয়স ছিল ১৯ ঘন্টা ৮ মিনিট।
চার ঘন্টা পর চাঁদের এই কৌনিক দূরত্ব বা ঘূর্ণন দূরত্ব বাংলাদেশে হয়েছিল বাস্তবে ছিল ১৩ ডিগ্রী ৫০ আর্ক মিনিট। কিন্তু দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতা ছিল ৭ ডিগ্রী ৫৩ আর্ক মিনিট, লেগ টাইম (সূর্য অস্ত যাবার যত সময় পর চাঁদ অস্ত যায়) ৪২ মিনিট এবং চাঁদের বয়স ছিল ২৪ ঘন্টা ১৭ মিনিট। অর্থাৎ বাংলাদেশের অবস্থান ভৌগলিক কারণে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে কিছুটা উপরের অক্ষাংশে অবস্থিত এবং চাঁদের গতিপথ বাঁকা থাকায় চাঁদের বয়স এবং কৌণিক দূরত্ব বাড়লেও দিগন্তরেখার উপর চাঁদের অবস্থান এবং লেগ টাইম ছিল কম যার কারণে অস্ট্রেলিয়াতে চাঁদ দৃশ্যমান হলেও বাংলাদেশে চাঁদ দেখা যায়নি। এটি একটি সহজ প্রমাণ যে পৃথিবীর চার পাশে চাঁদের ঘূর্ণন গতিপথ প্রতি ঘন্টায় বাড়লেই সবসময় চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। বাংলাদেশ ভিসিবিলিটি কার্ভের প্রান্তিক অবস্থানে থাকায় বাংলাদেশ থেকে সে বছরের পবিত্র শাওওয়াল মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হয়নি।
সউদি আরব চাঁদের তারিখ ঘোষণা করলেই অনেকে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন কিভাবে প্রমাণ করা যায় বাংলাদেশের ঘোষিত তারিখ ভুল। এক্ষেত্রে তাদের জন্য কয়েকটি বিষয় উপস্থাপন করছি। এর মাধ্যমে সহজেই বোঝা যাবে কেবল সউদি আরব নয় যে কোন দেশের চাঁদ দেখার ঘোষিত তারিখ সঠিক কিনা।
চাঁদ তালাশের ব্যাপারে তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
[ বিঃদ্রঃ এখানে প্রমাণ হিসেবে সউদি আরবে ১৪৪২ হিজরি সনের পবিত্র যিলহজ্জ মাসের তারিখ ঘোষণার বিষয়টি উপস্থাপন করা হল। বাংলাদেশ পবিত্র যিলহজ্জ মাসের চাঁদ তালাশ করেছে ১২ ছানি, ১৩৮৯ শামসী (১১ জুলাই ২০২১, রবিবার)। কিন্তু সউদি প্রেস এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী এবং তাদের মাস গণনার হিসাব অনুযায়ী সউদি আরব পবিত্র যিলহজ্জ মাসের চাঁদ তালাশ করেছে ১০ ছানী, ১৩৮৯ শামসী (০৯ জুলাই ২০২১, জুমুয়াবার)। ]
১। যে দেশ চাঁদ তালাশ করবে অবশ্যই সেই দেশে চাঁদ অমাবস্যা অতিক্রম করবে। এক থেকে দেড়দিন পূর্বেই চাঁদ হারিয়ে যায়। অতঃপর ২৯ তম দিনে অর্থাৎ চাঁদ তালাশের দিন চাঁদ দেখা যাবার আকৃতিতে থাকলে দেখা যাবে নতুবা নয়।
আমরা বলেছিলাম ৯ জুলাই সউদিতে যেদিন চাঁদ তালাশ করা হবে সেদিন চাঁদের বয়স হবে মাইনাস -২৪ ঘন্টা ৩৪ মিনিট। অর্থাৎ অমবস্যায় যেতে চাঁদের তখনো একদিন বাকী। বাস্তবে হয়েছেও তাই।
২। দ্বিতীয়ত যে দিন কোন দেশ তাদের আরবী মাসের ত্রিশতম দিন গুনবে সে দেশে অবশ্যই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা কুয়াশাচ্ছনা না থাকলে চাঁদ দেখা যাবে। আকাশ পরিষ্কার থাকার পরেও যদি চাঁদ দেখা না যায় তবে বুঝতে হবে মাসের গণনা শুরুতেই ভুল ছিল।
আমরা আগাম বলেছিলাম সউদীরা যিলকদ মাসের ক্ষেত্রে যা করবে তা হচ্ছে তারা মাস ত্রিশদিনে গণনা করবে । সেই অর্থে ১১ ছানী, ১৩৮৯ সাবত (১০ই জুলাই, শনিবার) হবে সউদিতে যিলকদ মাসের ত্রিশ দিন । অথচ সেদিন সউদিতে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা যাবে না। আসলেই তারা তাই করেছে। এস্ট্রোনমিক্যালি দেখা যাক সউদিতে সেদিন অর্থাৎ যেদিন ত্রিশ দিন গুনেছে সেদিন চাঁদের কি অবস্থা ছিল।
সেদিন চাঁদের বয়স ছিল ১৬ ঘন্টা ০৯ মিনিট, কৌনিক দূরত্বঃ ৭ ডিগ্রী ৫ আর্ক মিনিট, উচ্চতাঃ ৫ ডিগ্রী ৩৬ আর্ক মিনিট, লেগ টাইমঃ ৩৫ মিনিট। অর্থাৎ সউদির ত্রিশতম দিনেও চাঁদ দৃশ্যমান হবে না এবং হয়নি। অর্থাৎ তাদের যিলকদ মাসের গণনা মনগড়াভাবে হিসেব করেছে।
আমরা আগেই বলেছিলাম দেখা যাবে তারা আরাফা করবে ২০ ছানী, ইস্নাইনীল আযীম, ১৩৮৯ (১৯ জুলাই, সোমবার ) আর ঈদ পালন করবে ২১ ছানী, ছুলাছা ,১৩৮৯ (২০ শে জুলাই,মঙ্গলবার) যা চাঁদের সঠিক হিসেবে ৮ ই যিলহজ্জ ও ৯ ই যিলহজ্জ। অর্থাৎ নিশ্চিত হজ্জ বাতিল হতে যাচ্ছে। হজ্জ বাতিল হচ্ছে আরও নানা কারণেই তবে তা এখানে আলোচ্য বিষয় নয়।
৩। তৃতীয় আরেকটা প্রমান হচ্ছে যদি কোন দেশ আরবী মাসের ২৯ দিন দাবী করে চাঁদ তালাশের আয়োজন করে অথচ সেই তারিখে পৃথিবীর অন্যকোন দেশের সকালে অমবস্যায় যাওয়ার আগের চাঁদ দেখা যায় তবে বুঝতে হবে চাঁদ অমবস্যায় যায়নি। চাঁদ অবশ্যই পৃথিবীর সকল দেশের আড়ালে চলে যেতে হবে। যদি কোন দেশের আকাশে সকালে ওয়ানিং ক্রিসেন্ট (পুরনো চাঁদ) দেখা যায় তবে প্রমাণিত হবে চাঁদ পৃথিবীর আড়ালে যায়নি অর্থাৎ সেই দেশ ২৯ দিনের তারিখ ভুল গণনা করছে।
বাংলাদেশের আকাশে ১০ ছানী, ১৩৮৯ (৯ জুলাই, জুমুয়াবার) অর্থাৎ যেদিন সউরি আরব চাঁদ তালাশ করেছে সেদিন আমাদের দেশের সকালে ভোর ৪ টা ৩০ এর পর যিলকদের মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হইয়েছে এবং সেই চাঁদ অস্ট্রেলিয়া থেকে দেখা শুরু হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে যিলকদের চাঁদ সেদিন পৃথিবীর আড়ালেই যায়নি, অর্থাৎ চাঁদ অমবশ্যাতেই পৌঁছেনি তাহলে সউদি আরব সেদিন কিভাবে ২৯ তারিখ গণনা করলো?
কিন্তু বাংলাদেশে যেভাবে যিলকদ মাস শুরু করেছিল সে হিসেবে এ মাসের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা যাবার সমূহ সম্ভাবনা ছিল (যদি আকাশ মেঘলা না থাকে) এবং আমরা চাঁদ দেখেছিলাম। সে অনুযায়ী আরফা পালিত হবে ২১ ছানী, ছুলাছা ,১৩৮৯ (২০ শে জুলাই,মঙ্গলবার) আর ঈদুল আদহা পালিত হবে ২২ ছানী,১৩৮৯, আরবিয়া (২১ শে জুলাই, বুধবার) । বোঝা গেলো বাংলাদেশের চাঁদের হিসেব সঠিক বরং সউদিদের হিসেবে গরমিল।
এই ছবিটি লক্ষ্য করুন। সউদি আরব যেদিন ১৪৪২ হিজরি সনের পবিত্র যিলহজ্জ মাসের চাঁদ তালাশের প্রহশন করেছে সেদিন তার পূর্বাঞ্চলীয় সবুজ অংশের দেশসমূহের আকাশে সকালে পুরোনো যিলকদ মাসের চাঁদ দৃশ্যমান হয়েছে । এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যিলকদের চাঁদ অমাবস্যাতেই যায়নি। সউদি আরবে (মক্কা শরীফের সময় অনুযায়ী) চাঁদ অমাবস্যাতে যায় ১০ই জুলাই (১১ ছানী, ১৩৮৯) সাবত , শনিবার ভোর ৩ টায়।
১০ই জুলাইয়ের ছবি। (১১ ছানী, ১৩৮৯) সাবত , শনিবার । পুরো পৃথিবী জুড়েই চাঁদ অদৃশ্যমান। অর্থাৎ চাঁদ অমাবস্যাতে পৌঁছেছে।
শেষ কথাঃ
সউদি আরবকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে যারা আমাদের দেশের চাঁদের তারিখ ঘোষনাকে ভুল প্রমাণ করতে চান তারা আসলে নিজেরাই ভুলের মধ্যে নিপতিত। মুন সাইটিং এস্ট্রোনমি না বুঝলে বিষয়টি মেলানো কঠিন। তবে এখানে সংক্ষেপে যা না বললেই নয় তা হচ্ছে
সউদি আরব চাঁদ দেখে মাস গণনা করে না বরং একটি ক্রাইটেরিয়া ব্যবহার করে মাস নির্ধারণ করে। অনেকে ধারণা করে থাকেন উম্মুল কুরা ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী তাদের রচিত আগাম ক্যালেন্ডার হয়তো অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে তারও ব্যাতিক্রম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ তাদের রচিত আগাম ক্যালেন্ডারে যা তারিখ উল্লেখ ছিল বাস্তবে সেখান থেকে সরে গিয়ে মনগড়া তারিখ ঘোষণা করেছে। তাদের তারিখ ঘোষণায় ভুল হবার কারণে এ যাবত চারবার তারা তাদের চাঁদ দেখার পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে।
সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার কর্তৃক মনগড়া পদ্ধতি অবলম্বন
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অনুসরণ না করে অর্থাৎ খালি চোখে চাঁদ দেখার চেষ্টা না করে সউদী ওহাবী ইহুদী সরকার এ পর্যন্ত ৪টি মনগড়া পদ্ধতি অবলম্বন করেছে-
১) প্রথম মনগড়া পদ্ধতি (১৯৫০-১৯৭২ ঈসায়ী) : সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার ৯ উপরে অবস্থান করলে মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্তরেখার ৯ ডিগ্রী উপরে অবস্থান করলেই আরবী মাস শুরু করা যায় না। চাঁদ শুধু ৯ ডিগ্রী নয়; তারচেয়ে বেশি উচ্চতায় থাকলেও দৃশ্যমান নাও হতে পারে। সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী চাঁদ তালাশ করতে হবে এবং মাস শুরু করার জন্য খালি চোখে চাঁদ দেখতে হবে।
২) দ্বিতীয় মনগড়া পদ্ধতি (১৯৭৩-১৯৯৮ ঈসায়ী) : মধ্য রাতের পূর্বে অমাবস্যা সংঘটিত হলে পরের দিন থেকে নতুন মাস শুরু করতো। আবার সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স ১২ ঘণ্টার বেশি হলে নতুন মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ মহাকাশ বিজ্ঞানের তথ্যানুযায়ী ২৯তম দিন শেষে চাঁদ দেখতে পাওয়ার সর্বনিম্ন বয়স হলো ১৭ ঘন্টা থেকে ২৩ ঘণ্টা, এর পূর্বে চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে আসে না।
৩) তৃতীয় মনগড়া পদ্ধতি (১৯৯৮/৯৯-২০০১ ঈসায়ী) : সূর্যাস্তের ১ মিনিট পরেও চন্দ্র অস্ত গেলে নতুন মাস শুরু করতো। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সূর্যাস্তের পরে অমাবস্যার চাঁদও অস্ত যেতে পারে, তখন কোনভাবেই নতুন মাস শুরু হতে পারে না। আর যদি নতুন চাঁদও অস্ত যায়, সে সময় উক্ত চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে নাও আসতে পারে, ফলে নতুন মাস কোনভাবেই গণনা সম্ভব নয়।
৪) চতুর্থ মনগড়া পদ্ধতি (২০০৩ ঈসায়ী-বর্তমান সময় পর্যন্ত) : যদি সূর্যাস্তের পর চন্দ্র অস্ত যায় এবং সূর্যাস্তের পূর্বে অমাবস্যা সংঘটিত হয়, তবে পরের দিন থেকে নতুন মাস শুরু করে। নাঊযুবিল্লাহ!
চাঁদ যদি সূর্যাস্তের পর অস্ত যায় এবং অমাবস্যা যদি সূর্যাস্তের পূর্বেই সংঘটিত হয়, তারপরও চাঁদ খালি চোখে দেখা যাওয়ার আকৃতিতে নাও আসতে পারে। কেননা উপরের কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করেই আরবী মাস শুরু করা সম্মানিত শরীয়ত উনার নির্দেশ নয় বরং সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী চাঁদ খালি চোখে দেখে মাস শুরু করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে সমাজে তিন শ্রেণীর লোক দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে। এক শ্রেণীর লোক স্বাভাবিকভাবেই উপরোক্ত আলোচনা বিশ্বাস করবেন, যাদের পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার জ্ঞান আছে এবং যারা সউদী ওহাবী ইহুদীদের অন্যান্য অপকর্ম সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন।
অন্য এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা উপরোক্ত আলোচনা বিশ্বাস করার জন্য দলীল চাইবে। অর্থাৎ উপরোক্ত আলোচনার সত্যতার প্রমাণ চাইবে।
আরেক গন্ড-মূর্খ শ্রেণী রয়েছে, যারা বলবে সউদী আরব কি কম বুঝে? সেখানে কি আলিম-উলামা নেই, মহাকাশ বিজ্ঞানী নেই? এই শ্রেণী সউদী ওহাবী ইহুদী সরকারের অপকর্মগুলোকে নানা ভ্রান্ত যুক্তি দাঁড় করিয়ে হলেও বিশ্বাস করতে চায়।
এসব সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে পড়তে হবে আমাদের প্রকাশিত “ ইসলামী মাস নির্ধারণে সউদি ওহাবী ইহুদী চক্রান্তের মুখোশ উম্মোচন” বইটি।