অমাবস্যার পর, আরবী মাসের ২৯ তারিখে আমরা যখন আকাশে বাঁকা চাঁদ তালাশ করি তা কখনো দেখতে পাই কখনো পাইনা। বাঁকা চাঁদ কখন দেখা যেতে পারে বা কখন দেখা যাবেনা তার উপর অনেক গবেষণা হয়েছে যা ইতোপূর্বে আমরা আমাদের অন্যান্য বইগুলোতে আলোচনা করেছি। কিন্তু অনেক সময় বাঁকা চাঁদ দেখতে পাবার আকৃতিতে আসার পরেও আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়না। এর নেপথ্যেও অনেক কারণ থাকে আজ এখানে আমরা সে রকম একটি বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো । বাঁকা চাঁদ দেখতে পাবার আকৃতিতে থাকলেও অনেক সময় Atmospheric Conditions বা বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা অনুকূলে না থাকলে বাঁকা চাঁদ দেখতে পাওয়া যায় না। এই Atmospheric Conditions বা বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা বুঝতে হলে নীচের বিষয়গুলোর আলোকপাত জরুরী।
বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা অর্থাৎ Atmospheric Conditions নির্ভর করে কয়েকটি বিষয়ের উপর-
১। তাপমাত্রা (Temperature)
২। বাতাস (Wind)
৩। মেঘ (Clouds)
৪। অধঃক্ষেপণ (Precipitation)
আমরা যাকে আবহাওয়া (Weather) বলি তা হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বায়ুমন্ডলের অবস্থা। আমরা প্রায় প্রতিদিনের জন্য আবহাওয়ার তথ্য পাই। কারণ এটি স্বল্প সময়ের অবস্থা প্রকাশ করে। কিন্তু Climate হচ্ছে কোন অঞ্চলের দীর্ঘ সময়ের জন্য বায়ুমণ্ডলের অবস্থা বা আবহাওয়ার বর্ণনা।
এই বায়ুমণ্ডলের অবস্থার সাথে বাঁকা চাঁদ দেখতে পাওয়া এবং না পাওয়ার বিষয়টি নির্ভরশীল। তবে এই বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা অর্থাৎ Atmospheric Conditions বুঝতে হলে আমাদের আরও কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা দরকার ।
বায়ুমন্ডলীয় প্রতিসরণ
(Atmospheric Refraction)
বায়ুমন্ডলীয় প্রতিসরণ হচ্ছে আলো বা ইলেক্ট্রোমেগনেটিভ ওয়েভ যখন বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সোজা পথে চলার সময় বায়ু ঘনত্বের কারণে যে বিচ্যুতি ঘটে। বায়ুমণ্ডলীয় প্রতিসরণ খুব বেশী তীব্র হয় যখন Temperature gradients বেশী হয়। যখন বাতাসের গতি থাকে এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে নানাধর্মী অবস্থা থাকে তখন প্রতিসরণ সব জায়গায় এক রকম হয়না। এবং এই বিষয়টি সূর্যাস্তের সাথে বা সূর্যোদয়ের সময় চাঁদ, সূর্য এবং তারা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু অন্যরকম দেখা যায়।
দিগন্তের কাছে বেশী প্রতিসরণের কারণে সূর্যের যে ব্যাস তার চেয়ে বেশী বড় দেখায়। ফলে সূর্যের নীচের অংশ যখন দিগন্ত ছোঁয় তখন আসলে সূর্যের উচ্চতা (০) শুন্য। অর্থাৎ যদি হঠাত বায়ুমন্ডল হারিয়ে যায় তখন সূর্যকে আর দেখা যাবে না। চাঁদের ক্ষেত্রেও একইরকম ঘটনা ঘটে। দিগন্তের কাছে রিফ্রেকশন খুবই পরিবর্তনশীল।
তাহলে আমরা দেখতে পেলাম চাঁদ দেখতে পাবার জন্য বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা অর্থাৎ Atmospheric Conditions গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর সাথে জড়িত বায়ুমন্ডলীয় প্রতিসরণ (Atmospheric Refraction) আবার এর সাথে জড়িত বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা, বাতাসের গতি এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে নানাধর্মী অবস্থা ।
আমরা প্রথমেই আলোচনা করবো বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রা কি? এবং কিভাবে বায়ুমন্ডলীয় তাপমাত্রা উত্তপ্ত ও শীতল হয়। কেননা তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং এর কারণে কোন অঞ্চলের ক্লাইমেট এবং আবহাওয়া পরিবর্তিত হয় এবং এই পরিস্থিতি কোন অঞ্চলে পরোক্ষভাবে চাঁদ দেখতে পাওয়া বা না পাওয়ার উপর নির্ভরশীল।
বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা (Atmospheric Temperature)
পৃথিবীর নিজের কোন আলো ও তাপ নেই। সে সূর্যের আলো থেকে আলো ও তাপ পায়। সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা হচ্ছে ৬০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সূর্য যে তাপ দিচ্ছে এটাকে বলে সোলার রেডিয়েশন এবং এর অল্প আমরা পাই। প্রায় ২০ মিলিয়নের এক ভাগ আমরা পাই। যে পরিমাণ রেডিয়েশন পৃথিবীতে আসে তাকে বলে ইন্সোলেশন (Insolation) । বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রার একমাত্র উৎস হচ্ছে সূর্যের আলো তবে তা সরাসরি বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে না বরং সাধারণত চারটি উপায়ে আমাদের বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রাকে গরম ও ঠাণ্ডা করে থাকে।
রেডিয়েশন এর মাধ্যমে
কন্ডাকশন এর মাধ্যমে
কনভেকশন এর মাধ্যমে
এডভেকশন এর মাধ্যমে
বিকিরণ (Radiation): রেডিয়েশন হচ্ছে হিটিং ওয়েভ ট্রান্সমিশন এর মাধ্যমে সরাসরি কিছুকে উত্তপ্ত করা। সূর্য থেকে আসা রেডিয়েশনের খুব কমই পৃথিবীর বায়ুমন্ডল শোষণ করে থাকে অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল সূর্যকিরণের দ্বারা সরাসরিভাবে উত্তপ্ত হয় না । সুর্য থেকে আলোর তরঙ্গ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে । সূর্য থেকে আসা তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এলেও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে প্রথমে কঠিন ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে । ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকিরণ হওয়ার ফলে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয় । এটাকে Terrestrial Radiation বলে। এভাবে বায়ুমন্ডল সরাসরি আসা রেডিয়েশনের চেয়ে Terrestrial Radiation দ্বারা বেশী উত্তপ্ত হয়।
পরিবহণ (Conduction): পরিবহণ বা কন্ডাকশন হচ্ছে একটা প্রসেস যার মাধ্যমে তাপ কোন বস্তুর মধ্যে মলিকুলার কার্যক্রমের মাধ্যমে ছড়ায়। বাতাসের যে অণুগুলো নীচের দিকে ভূপৃষ্ঠের সাথে থাকে সেখান থেকে তাপ উপরের বাতাসের অণুগুলোকে উত্তপ্ত করে থাকে।
পরিচলন (Convection): কোন বস্তু বা পদার্থ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিচলনের মাধ্যমে যে তাপ স্থানান্তরিত হয়ে থাকে তাকে কনভেকশন বলে। যখন নীচের স্তরের বাতাস গরম হয় তখন তা সম্প্রসারিত হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় তখন অন্য পাশ থেকে বতাস সেই স্থান দখল করে নেয়। এইভাবে নীচ থেকে উপরে ও উপর থেকে নীচে বায়ু চলাচলের ফলে পরিচালন ক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় ।
এডভেকশন (Advection): যখন বাতাস গরম স্থান থেকে ঠান্ডা স্থানে সরে যায় সেটি গিয়ে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে যখন বাতাস ঠান্ডা স্থান থেকে গরম স্থানের দিকে যায় তা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কমে যায় বা বেড়ে যায় বাতাসের অনুভূমিক চলাচলের কারণে।
আমরা উপরে আলোচনা করলাম কিভাবে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে থাকে এবারে আমরা দেখবো যে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা কি কি কারণে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আর বিভিন্ন অঞ্চলের অবস্থান ও তাপমাত্রা বিষয়টি চাঁদ দেখতে পাওয়া এবং না পাওয়ার উপর কিভাবে প্রভাব ফেলে।
পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রাঃ পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা সর্বত্র একইরকম থাকে না। বিভিন্ন ফ্যাকটরের কারণে বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা বিভিন্ন হয়ে থাকে।
ক। কোন জায়গার অক্ষাংশ।
সুর্যরশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস হলেও, অক্ষাংশ অনুসারে সূর্যকিরণ ভূপৃষ্ঠে কোথাও লম্বভাবে বা সোজা ভাবে এবং কোথাও তির্যক ভাবে পড়ে ।
লম্বভাবে পতিত রশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত রশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয় ।
নিরক্ষরেখার ওপর প্রায় সারা বছর ধরে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে ।
নিরক্ষরেখা থেকে যতই উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর দিকে যাওয়া যায় ততই সূর্যরশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে তির্যক ভাবে পড়তে থাকে যার ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উভয় মেরুর দিকে উত্তাপ ক্রমশ কমতে থাকে ।
সাধারণত, নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে প্রতি ১০ অক্ষাংশের তফাতে ০.২৮০ সেলসিয়াস হারে উষ্ণতা কমে যায় ।
নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ২৩.৫° অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থান গ্রীষ্মমণ্ডল বা উষ্ণমণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চলে দিনের দৈর্ঘ্যের বিশেষ কোনো পার্থক্য দেখা যায় না এবং প্রত্যেক স্থানে সূর্যরশ্মি বছরে দুদিন মধ্যাহ্নে লম্বভাবে পতিত হয় । এইজন্য সারা বছর ধরে এই অঞ্চল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উষ্ণ থাকে ।
নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে ২৩.৫° থেকে ৬৬.৫° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চল গ্রীষ্মে খুব একটা উষ্ণ বা শীতে খুব একটা শীতল হয় না ।
দুই মেরুর চতুর্দিকে ৬৬.৫° থেকে ৯০° অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল হিমমণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সবচেয়ে তির্যকভাবে পড়ে । এই অঞ্চলের সর্বত্রই বছরে অন্তত একদিন আকাশে সূর্যকে দেখাই যায় না । এই সমস্ত কারণে এই অঞ্চল দুটি অত্যন্ত শীতল ।
সুতরাং অক্ষাংশ অনুসারে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে ।
খ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা
উচ্চতা বলতে বোঝায় কোন জায়গা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে কতটুকু উঁচুতে। উচ্চতা বায়ুমন্ডলের তাপের একটি প্রধান নিয়ন্ত্রক সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা বাড়তে থাকলে তাপমাত্রা কমতে থাকে ।
ভূমি উঁচু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা কমে যাওয়ার কারণ হল :-
১) উপরের বায়ুস্তরে ধূলিকণা কম থাকায়, ঐ বায়ূস্তরের তাপ গ্রহণ ও সংরক্ষন করার ক্ষমতা কম হয়;
২) উপরের বায়ুস্তর অপেক্ষাকৃত হালকা বলে, ঐ স্তরের বায়ু সহজেই তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়;
৩) সূর্যকিরণ বায়ুমন্ডলের মধ্যে দিয়ে আসে, কিন্তু বায়ুর সূর্যকিরণের উত্তাপ সোজাসুজি গ্রহণ করার ক্ষমতা খুব কমই । সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পড়ে ভূপৃষ্ঠকে প্রথমে উত্তপ্ত করে, পরে সেই উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করলে বায়ূমন্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর সেই বিকীর্ণ তাপ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ লাভ করে । এজন্য ঠিক ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরের উপরের স্তরের বায়ু ক্রমশই কম উষ্ণতা লাভ করে বলে ওপরের বায়ুস্তরে উষ্ণতা কম হয়;
৪) ভূপৃষ্ঠের উত্তপ্ত বাতাস হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং সেখানে হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় তা শীতল হয়ে পড়ে ।
উষ্ণতার বৈপরিত্য [Inversion of Temperature] :- সাধারণ নিয়ম অনুসারে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা কমতে থাকে । কিন্তু কখনও কখনও উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ূমন্ডলের উষ্ণতা হ্রাস না পেয়ে বরং বেড়ে যায়, একে বায়ুমণ্ডলের বৈপরীত্য উত্তাপ বা বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে । এই ব্যতিক্রম সাধারণত পার্বত্য উপত্যকার শান্ত আবহাওয়ায় দেখতে পাওয়া যায় ।
বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ:-
১) ঠান্ডা বায়ু গরম বায়ুর চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী । তাই শীতকালে ‘U’ আকৃতির পার্বত্য উপত্যকার উপরের অংশের বাতাস রাত্রিবেলায় তাপ বিকিরণের ফলে খুব ঠান্ডা ও ভারী হয়ে পড়ে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ওই বাতাস (যা ‘ক্যাটাবেটিক’ বায়ু নামে পরিচিত) পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আস্তে আস্তে নীচে নেমে এসে উপত্যকার নীচের অংশ বেশি ঠান্ডা হয় এবং নীচের উষ্ণ বায়ু ওপরে ওঠে । এর ফলে উপত্যকার নীচের অংশের তুলনায় ওপরের অংশে বায়ুর তাপমাত্রা বেশি হয় ।
২) ভূপৃষ্ঠ বায়ুমন্ডলের তুলনায় দ্রুতহারে তাপ বিকিরণ করে বলে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুও বেশি শীতল হয় । অন্যদিকে, বায়ুর পরিবহণ ক্ষমতা কম হওয়ায় উপরের স্তরের বায়ু সহজে শীতল হয় না । এই কারণে বৈপরীত্য উষ্ণতার সৃষ্টি হয় ।
বৈপরীত্য উষ্ণতার উদাহরণ:- কোনও শৈলাবাসে (যেমনঃ দার্জিলিং) গেলে বৈপরীত্য উত্তাপ ব্যাপারটা ভালোভাবে পরিলক্ষিত হয় । ভোরবেলায় এখানে বৈপরীত্য উত্তাপের জন্য উপত্যকাগুলি মেঘে ঢাকা থাকে । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ূর উষ্ণতা বাড়লে উপত্যকাগুলি মেঘমুক্ত হয় ।
গ। সাগর ও জমির বিস্তৃতি। (সাগর থেকে ভূমির দূরত্ব)
১) পৃথিবীর কোনো স্থান সমুদ্র থেকে যত দূরে অবস্থিত হয়, সেখানে উষ্ণতার ততই চরম ভাব দেখা যায়, কারণ, গ্রীষ্মকালে একই অক্ষাংশে অবস্থিত মহাদেশগুলি স্থলভাগের উপরিভাগ সমুদ্রের পানির চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয় । ফলে, সমুদ্র থেকে ঠান্ডা বায়ু মহাদেশগুলির দিকে প্রবাহিত হয়ে মহাদেশের উষ্ণতা হ্রাস করে ।
২) শীতকালে মহাদেশগুলির স্থলভাগের উপরিভাগ সমুদ্রের পানির চেয়ে বেশি শীতল হয়ে পড়ে এবং মহাদেশগুলি থেকে ঠান্ডা বাতাস সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয় । এই জন্য সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে আবহাওয়া কখনই চরমভাবাপন্ন হয় না, অর্থাৎ উষ্ণতার পরিমাণ কখনই খুব বেশি বা কম হয় না ।
৩) সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত মহাদেশের ভিতরের দিকে সমুদ্রের প্রভাব ততটা পড়ে না বলে পানিবায়ুতে চরমভাব দেখা যায়, অর্থাৎ ঠান্ডা ও গরম দুই-ই খুব বেশি হয় ।
৪) পানি ও যমিনের তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য দিনের বেলা সমুদ্র থেকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাস স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, একে সমুদ্র বায়ু বলে । আবার রাত্রি বেলা স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা বাতাস সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়, একে স্থলবায়ু বলে।
উদাহরণ হিসেবে এখানে দেখানো হয়েছে দক্ষিন আফ্রিকার দুটো এলাকা। একটি ডারবান যা পূর্বে সমুদ্রের কাছে অবস্থিত আর কিম্বারলি যা সমুদ্র থেকে ৬২০ কিলোমিটার ভিতরে অবস্থিত।
ঘ। সমুদ্র স্রোতঃ সমুদ্র স্রোত দুই ধরণের হয়ে থাকে উষ্ণ স্রোত এবং শীতল স্রোত।
উষ্ণ স্রোত সৃস্টি হয় বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে এবং সেখান থেকে উত্তর ও দক্ষিণ উঁচু অক্ষাংশের দিকে প্রবাহিত হয়।
শীতল স্রোত সৃস্টি হয় উত্তর ও দক্ষিন উঁচু অক্ষাংশের দিকে এবং তা প্রবাহিত হয় বিষুবীয় অঞ্চলের দিকে।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে একই দেশের যে অঞ্চলের পাশ দিয়ে গরম স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে সে দেশ সবুজ-শ্যমল। আর যে অঞ্চলের পাশ দিয়ে ঠান্ডা স্রোত প্রবাহিত হয়েছে সেখানকার আবহাওয়া রুক্ষ, বনায়ন কম এবং মরুভূমি রয়েছে।
বায়ুর তাপমাত্রার উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ; আবার শীতল স্রোতের প্রভাবে তাপমাত্রা হ্রাস পায় । যেমন; উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম ইউরোপের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডার হাত থেকে ওখানকার দেশগুলি রক্ষা পেয়েছে । কিন্তু শীতল লাব্রাডার স্রোতের প্রভাবে লাব্রাডার উপকূল বরফে জমে থাকে । উভয় স্রোতের [উষ্ণ ও শীতল] মিলনে সেখানে গভীর কুয়াশার সৃষ্টি হয় ।
ভূমির ঢাল
ভূমির ঢালের তারতম্যের জন্য বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য ঘটতে দেখা যায়, যেমন;
উত্তর গোলার্ধে কোনো স্থানের ভূমির ঢাল দক্ষিণমুখী অর্থাৎ নিরক্ষরেখার দিকে হলে সেখানে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ে, কারণ উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণমুখী ঢালে সূর্য প্রায় খাড়াভাবে কিরণ দেয় । এর ফলে সেখানকার বায়ুমণ্ডল বেশি উত্তপ্ত হয় । আবার,
উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানের ভূমির ঢাল নিরক্ষরেখার বিপরীত দিকে হলে সেখানে সূর্যকিরণ তির্যকভাবে পড়ে এবং সেখানকার বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা তুলনামূলক ভাবে কম হয় । যেমন, উত্তর গোলার্ধে হিমালয়, আল্পস প্রভৃতি পর্বতের দক্ষিনদিক নিরক্ষরেখার দিকে ঢালু হওয়ায় তাপমাত্রা বেশি হয়, কিন্তু উত্তর দিক উত্তর মেরুর দিকে ঢালু হওয়ায় তাপমাত্রা খুব কম হয় ।
ঙ। ভূমির প্রকৃতি ও বনায়নের বিস্তৃতি।
ভূমির প্রকৃতি :- শুকনো বালি ও পাথুরে জমি সূর্যের তাপে সহজেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে, আবার দ্রুত তাপ বিকিরণ করে সহজেই শীতল হয়ে পড়ে । ফলে সেখানে দিনে ও রাতে, শীতে ও গ্রীষ্মে তাপের পার্থক্য বেশি হয় । কিন্তু যেসব ভূমি সরস পলিমাটিতে গড়া বা যেখানে পানিভুমি আছে, সেখানকার ভূমি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয় এবং শীতল হয় ; সেই জন্য বায়ুর তাপেরও পরিবর্তন ধীরে ঘটে ।
অরণ্যের অবস্থান :- ভুমির উপর অরণ্য থাকলে ভূমি আদ্র থাকে । ফলে বায়ু দ্রুত উত্তপ্ত বা শীতল হতে পারে না । তা ছাড়া মাটি থেকে গাছ যে রস টেনে নেয়, সেই রস বাষ্পের আকারে পাতা দিয়ে বায়ুতে ছেড়ে দেয় । ফলে বায়ুতে পানীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । এই পানীয়বাষ্প বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে । বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পায় । এই ভাবে অরণ্যের অবস্থান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বায়ুর তাপমাত্রার উপর প্রভাব বিস্তার করে ।
বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা ও বায়ু চাপঃ
কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে যখন তার বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যায় অর্থাৎ তার ঘনত্ব যখন বেড়ে যায় তখন সে বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ বায়ুর উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়, আবার একই রকমভাবে যখন কোন কারনে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে তার বিভিন্ন উপাদান গুলি হ্রাস বা কমে যায় তখন সেই বায়ুর চাপ কমে যায়।
বায়ুর চাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ [Air Pressure and Major factors influencing it]:- পৃথিবীর যাবতীয় পদার্থের মত বায়ুরও ওজন আছে । ফলে বায়ুও চাপ দেয় । ভুপৃষ্ঠে প্রতি এক বর্গ সেন্টিমিটারে বায়ুর চাপ এক কিলোগ্রামের সমান । বায়ু চারদিক থেকে চাপ দেয় । তাই সাধারণভাবে বায়ুর চাপ অনুভূত হয় না । চাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটারের পারদ-স্তম্ভের উচ্চতা থেকে বায়ুর চাপ মাপা হয় । সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর স্বাভাবিক চাপ ২৯.৯২ ইঞ্চি বা ৭৬০ মিলিমিটার পারদ-স্থম্ভের সমান । বেশির ভাগ দেশে ইঞ্চির বদলে মিলিবার-এ [Milibar] বায়ুর চাপ প্রকাশ করা হয় । ৭৬০ মিলিমিটার বা ২৯.৯২ ইঞ্চি ১০১৩ মিলিবারের সমান । পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের বায়ুর চাপ দেখা যায় । নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্য হয়, যেমন:- বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুতে পানীয়বাষ্পের পরিমাণ, ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা, পৃথিবীর আবর্তন, বায়ুস্তরের উচ্চতা ।
বায়ুর উষ্ণতা:- বায়ুর উষ্ণতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ু আয়তনে বাড়ে এবং বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় । ফলে বায়ু হালকা হয়ে যায় । হালকা বায়ুর চাপও কম হয় । অতএব, বায়ুতে যখন তাপ বেশি হয় তখন বায়ুর চাপ কম হয় । একইভাবে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেলে বায়ূর ঘনত্ব বেড়ে যায় বলে বায়ুর চাপও বৃদ্ধি পায় । বায়ুচাপ সম্পূর্ণভাবে উষ্ণতার ওপর নীর্ভরশীল । উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুর চাপ বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ উষ্ণতা কমলে বায়ুর চাপ বাড়ে এবং উষ্ণতা বাড়লে বায়ুচাপ কমে ।
বায়ুতে পানীয়বাষ্পের তারতম্য:- বায়ুতে পানীয়বাষ্পের তারতম্যের জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । পানীয়বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর চেয়ে হালকা । সেইজন্য যে বায়ুতে পানীয়বাষ্প বেশি থাকে সেই বায়ু শুকনো বায়ুর চেয়ে হালকা এবং তার চাপ ও অপেক্ষাকৃত কম । এইকারণে বর্ষাকালে বায়ুতে পানীয়বাষ্প বেশি থাকায় বায়ুর চাপ কম হয় । শুষ্ক বায়ু ভারী এবং তার চাপ ও বেশি হয় ।
ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা:- ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বাযুস্তরের গভীরতা ও ঘনত্ব তত কম হয় । অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুস্তরের ঘনত্ব কমতে থাকে । বায়ুর ঘনত্ব কমলে স্বাভাবিকভাবে বায়ুর ওজন কমে যায়, এবং ওজন কমলে বায়ুর চাপও কম হয় । সাধারণত প্রতি ৯০০ ফুট উচ্চতায় ১ ইঞ্চি বা প্রতি ২৭৪ মিটারে ৩৪ মিলিবার বায়ুর চাপ কম হয় । তবে এই হারে বায়ুর চাপ উপরের বায়ুস্তরে সব সময়ে কমে না । কারণ উপরের বায়ুস্তর ক্রমশ পাতলা ।
পৃথিবীর আবর্তন:- পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যেও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহ বাইরের দিকে ছিটকে চলে যেতে চায় । এর প্রভাবেও বায়ুর চাপের পার্থক্য হয় । পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে কোরিওলিস বল সৃষ্টি হয় । এই কোরিওলিস বলজনিত কেন্দ্র বহির্মুখী শক্তির প্রভাবে বায়ুমন্ডলের বায়ু বাইরের দিকে চলে যেতে চায় এবং সেইজন্য বায়ুচাপেরও তারতম্য হয়ে থাকে ।
প্রসঙ্গত বলা যায়, প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য দুই মেরু অঞ্চলে বায়ু উচ্চচাপযুক্ত হয় । আবর্তন গতির ফলে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ওই উচ্চচাপযুক্ত মেরুবায়ু ছিটকে যায় । ফলে সুমেরু বৃত্ত ও কুমেরু বৃত্তের কাছে বায়ুচাপ হ্রাস পেয়ে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি করে । এছাড়া আবর্তন গতির ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ বায়ু উপরে উঠে উত্তর-দক্ষিণ উভয় দিকেই ছিটকে যায় । এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে বায়ুর চাপ কমে যায় । কিন্তু ওই বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলে পুনরায় নীচে নেমে আসে বলে বায়ুচাপ বেশী হয় ।
বায়ুস্তরের উচ্চতা:- বায়ুস্তরের উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । বায়বীয় পদার্থের নিম্নতম স্তরের যে অংশ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে (Gravitational attraction) ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন হয়ে থাকে, সেই অংশ সাধারণত বায়ুমণ্ডল নামে পরিচিত । বায়ুমণ্ডলের উপরিসীমা প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার ধরা হলেও বায়ুমণ্ডলের ৯৯% ভর ভূপৃষ্ঠের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে । বায়ুমণ্ডলের এই অংশেই সৌরতাপ সংরক্ষণ করে এবং এই অংশের চাপই আমরা অনুভব করি ।
ভূ-পৃষ্ঠে পানিভাগ ও স্থলভাগের বন্টনঃ ভূপৃষ্ঠে পানিভাগ ও স্থলভাগের বন্টন বায়ুর চাপের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে । সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু আদ্র ও হালকা হওয়ার কারণে তার চাপ যেমন কম থাকে, তেমনই স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক ও ভারী হওয়ার কারণে তার চাপও বেশী হয় ।
বায়ুমন্ডলের গঠনকারী উপাদানঃ বায়ুমন্ডল গঠনকারী উপাদানগুলিও বায়ুচাপের তারতম্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক । স্থানবিশেষে বায়ুতে উপাদানের তারতম্য থাকলে তার পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুর চাপেরও তারতম্য দেখা যায় । যেসব স্থানের বায়ুতে বালিকণা, ধূলিকণা, কার্বন কণা প্রভৃতি ভারী উপাদান থাকে, সেখানে বায়ুচাপ বেশী হয় । আবার, যেসব স্থানের বায়ুতে হাইড্রোজেন, ওজোন, হিলিয়াম প্রভৃতি হালকা উপাদান থাকে, সেখানে বায়ুচাপ কম হয়
এই বায়ুমন্ডলীয় চাপ যেহেতু তাপমাত্রার সাথে জড়িত আর এই বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থার সাথে যেহেতু আবার বায়ুমণ্ডলীয় প্রতিসরণ জড়িত তাই এসব বিষয়গুলো চাঁদ দেখতে পাবার সাথে জড়িত।
২। বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা অর্থাৎ Atmospheric Conditions নির্ভর করে আরও একটি বিষয়ের উপর তা হচ্ছে বাতাস।
ঠান্ডা বাতাস (Cool air): যখন তাপমাত্রা অথবা বায়ুচাপ কমে যায় তখন বাতাস খুব বেশী পানিকণা ধরে রাখতে পারে না। যখন বাতাস ঠান্ডা হয় তখন বাস্প জমাটঁ বাধতে থাকে এবং মেঘে পরিণত হয়।
বাতাসের আদ্রতা (Humidity)
বাতাসের আদ্রতা বা Humidity হচ্ছে বাতাসে পানীয় বাস্পের পরিমাণ। গরম বাতাস, ঠান্ডা বাতাসের চেয়ে বেশী পরিমাণ পানীয় বাস্প ধরে রাখতে পারে। এ কারণেই গরমকালে বাতাসে পানীয় বাস্পের পরিমাণ বেশী থাকে। পানীয় বাস্পের পরিমাণ বেশী হলে চাঁদ দেখতে পাওয়া কষ্টকর হয়ে পরে।
৩। বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা অর্থাৎ Atmospheric Conditions নির্ভর করে যে আরেকটি বিষয়ের উপর তা হচ্ছে
মেঘঃ
কিভাবে মেঘ জমে (How clouds form)
৩ ক। পানীয় বাস্প (Water vapor)
৩ খ । ঠান্ডা বাতাস (Cool air)
৩ গ। ধূলিকণা (Dust particles)
পানীয় বাস্প (Water vapor): যখন সূর্যের তাপে পানি বাস্পে পরিণত হয় এই বাস্পে পরিণত হওয়াকে বলে বাস্পীভবন বা Evaporation। এই পানীয় বাস্প বা Water vapour বাতাসের সাথে মিশে যায়।
বাস্পীভবন (Evaporation) অর্থাৎ পানি বাস্পে পরিণত হওয়াকে দুটি বিষয় প্রভাবিত করে
তাপমাত্রা এবং বাতাস।
তাপমাত্রা বেশী হলে পানি দ্রুত বাস্পে পরিণত হয়। আর বাতাস বেশী থাকলেও পানি দ্রুত বাস্পে পরিণত হতে থাকে।
ধূলিকণা (Dust particles): ধূলামুক্ত বাতাস কখনো মেঘ সৃস্টি করতে পারে না। এই ধূলি আসে ধূলিঝড়, মরুঝড়, আগ্নেয়গিরির উদগিরিত ছাই, রাস্তাঘাটের ধূলা ইত্যাদি থেকে।
৪। প্রিসিপিটেশন (Precipitation) বা অধঃক্ষেপণ:
Atmospheric Conditions যে চারটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল তার চতুর্থ কারণটি হচ্ছে প্রিসিপিটেশন (Precipitation)। এই প্রিসিপিটেশন এর কারণে আবহাওয়া বিভিন্ন রকম রূপ ধারণ করে। আবহাওয়ার বিভিন্ন রূপ বাঁকা চাঁদ দেখতে কখনো প্রতিবন্ধকতা আবার কখনো সহায়তা করে থাকে। যেমন আকাশ যখন মেঘলা হয়ে যায় তখন বাঁকা চাঁদ দেখতে পাওয়া কষ্টকর হয় কিন্তু বৃস্টি হবার পর আকাশ পরিস্কার হয়ে গেলে চাঁদ দেখতে পাবার সম্ভাবনা অনেকগুনে বেড়ে যায়। প্রিসিপিটেশন বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। নীচে এর আলোচনা করা হল।
বেশী তাপমাত্রা মানে বেশী পানি বাষ্পীভবন (Evaporation)। আর বেশী পানি বাষ্পীভবন মানে হচ্ছে বাতাসে পানীয় কনার পরিমাণ বেশী অর্থাৎ বেশী Humidity.
যখন বাতাসে তরল পানির কণা সমূহ এক্ত্রিত হয়ে বড় কণায় পরিণত হয় তখন মাটিতে নেমে আসে। তাপমাত্রা নির্ধারণ করে কি ধরণের Precipitation হবে। কয়েক ধরণের প্রিসিপিটেশন বা অধঃক্ষেপণ হয়ে থাকে।
[১] বৃষ্টিপাত [Rainfall], [২] তুষারপাত [Snowfall], [৩] শিলাবৃষ্টি [Hail], [৪] স্লিট [Sleet], [৫] শিশির [Dew], [৬] তুহিন [Frost] প্রভৃতি অধঃক্ষেপণের উদাহরণ ।
শেষ কথাঃ
কোন স্থান বা কোন দেশ থেকে প্রথম বাঁকা চাঁদ দেখা যাবে?
আমরা জানি, চাঁদ যখন পৃথিবী ও সূর্যের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে তখন তাকে অমাবস্যা বলে। অমাবস্যার সময় চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। চাঁদের এই মাঝামাঝি অবস্থানের পর থেকে প্রতি মুহূর্তে চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য থেকে সরে আসতে থাকে এবং তার আলোকিত অংশের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রাথমিক অবস্থায় এতই সূক্ষ্ম যে খালি চোখে দেখা যায় না।
একমাত্র অমাবস্যার সময় সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী মোটামোটিভাবে একই রেখা বরাবর অবস্থান করে। পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের ঘূর্ণন গতির দরুন চাঁদ তার অবস্থান থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। পৃথিবী পৃষ্ঠের একজন দর্শক যদি তার চোখ থেকে সূর্যে এবং চাঁদে দুটো রেখা কল্পনা করে তবে এই রেখাদ্বয় দর্শকের চোখে যে কোণ তৈরী করবে সেটাই হবে চাঁদ-সূর্যের কৌণিক দূরত্ব। অমাবস্যার সময় চাঁদ-সূর্যের কৌণিক ব্যবধান শুন্য ডিগ্রী। অমাবস্যার পর থেকে চাঁদ যত সরে আসতে থাকে সূর্যের সাথে তার কৌণিক ব্যবধানও বাড়তে থকে। আমরা জানি যে, চাঁদ সূর্য থেকে ৭ ডিগ্রী পরিমাণ সরে আসলেও চাঁদ থেকে সূর্যের কোন প্রতিফলিত আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় না। চাঁদের মধ্যে যে সকল পাহাড়, পর্বত রয়েছে সেগুলো এই আলো প্রতিফলিত হতে বাধার সৃষ্টি করে। তবে এই ৭ ডিগ্রী পরিমাণ সরে আসতে বা কৌণিক দূরত্ব তৈরী করতে চাঁদের সময় লাগে ৮.৫ ঘণ্টা থেকে ১৫.৫ ঘণ্টা প্রায়। অর্থাৎ চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব কাছে থাকে, তখন লাগে প্রায় ৮.৫ ঘণ্টা আর চাঁদ যখন পৃথিবীর দূরে থাকে তখন লাগে ১৫.৫ ঘণ্টা প্রায়। ১৯৩০ সালে ফ্রান্সের একজন এস্ট্রোনমার এন্ড্রি ডেনজন প্রথম এই ধারণা দেন যে, চাঁদ সূর্য থেকে ৭ ডিগ্রীর চেয়ে কম সরে থাকলে পৃথিবী থেকে কখনো চাঁদ দৃশ্যমান হবে না। ৭.২ ডিগ্রী থেকে ৮.৫ ডিগ্রী কোণে চাঁদ, সূর্য থেকে দূরে অবস্থান করলে কিছু আলো যদিও প্রতিফলিত হয়, কিন্তু দিগন্তের উজ্জলতার চেয়ে চাঁদের উজ্জলতা কম থাকার দরুণ খালি চোখে চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। বর্তমানে বায়ুমন্ডলের দূষণ, আলোর দূষণ এবং ধূলাবালি কারণে চাঁদ সূর্য থেকে ১০-১০.৫ কখনও ১২ ডিগ্রী পর্যন্ত সরে আসলে তারপর চাঁদ দৃশ্যমান হয়। এই পরিমাণ কোণ তৈরী করতে চাঁদের লাগে প্রায় ১৭ থেকে ২৩ ঘণ্টা। চাঁদের কৌণিক দূরত্বের পর, চাঁদ দেখতে পাবার জন্য আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দিগন্ত রেখার উপর চাঁদের উচ্চতা। চাঁদের পূরত্ব বা চাঁদের মোটা আলোর ফালি যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও সূর্যাস্তের সময় চাঁদ দিগন্ত রেখা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ উচ্চতায় না থাকলে চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ পর্যবেক্ষণ স্থানে যদি চাঁদের কৌণিক দূরত্ব ৯-১২ ডিগ্রী অথবা বেশি হয় এবং দিগন্তরেখা থেকে চাঁদের উচ্চতা নূন্যতম ১০ ডিগ্রী হয় তবে সে স্থানে চাঁদ দৃশ্যমান হতে পারে (যদি মেঘ এবং অন্যান্য উপাদান বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।)
সাধারণভাবে পৃথিবীর কোন স্থান থেকে প্রথমে চাঁদ দৃশ্যমান হবার জন্যে চাঁদের কৌণিক দূরত্ব এবং দিগন্ত রেখার উপর চাঁদের উচ্চতা দুটো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ ছাড়াও চাঁদের বয়স এবং সূর্য অস্ত যাবার কত সময় পর চাঁদ অস্ত যায় (যাকে লেগ টাইম বলে) এই দুটিও গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। চাঁদ তালাশের দিন সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স কমপক্ষে ১৭ ঘন্টার বেশী হতে হবে এবং লেগ টাইম হতে হবে ৪২ মিনিটের বেশী। পৃথিবীর যে সকল স্থানে চাঁদ দেখা যাবার সম্ভাবনা থাকে সেখানে এই চারটি মান পর্যবেক্ষণ করা হয়। পৃথিবীর যে স্থানে সূর্যাস্তের সময় প্রথম এই মানগুলো অনুকূলে থাকবে সেখানেই চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হবে। সূর্যাস্তের সময় চাঁদ পর্যবেক্ষণ স্থানে যদি কৌণিক দূরত্ব ৯-১২ ডিগ্রী এবং দিগন্তরেখার উপর চাঁদের উচ্চতা ১০ ডিগ্রীর বেশি, চাঁদের বয়স ১৭ ঘন্টার বেশী, লেগ টাইম ৫২ মিনিটের বেশী হয় তবে পৃথিবীর সেই স্থানে চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হবে।
যদি তার একটি মানও কম হয় তখন দেখা যাবার সম্ভাবনা কমে আসবে। সুতরাং পৃথিবীর নির্দিষ্ট কোন স্থানে প্রতি মাসে চাঁদ দৃশ্যমান হয় না। পৃথিবীর যে অংশে চাঁদের এই চারটি মান প্রথম অনুকূলে আসে সেখানেই চাঁদ প্রথম দৃশ্যমান হতে পারে। তা হতে পারে পৃথিবীর পূর্বে অস্ট্রেলিয়ায়, নিউজিল্যান্ডে বা হতে পারে পশ্চিমের পলিনেশিয়ান দ্বীপপূঞ্জে বা হতে পারে পৃথিবীর মধ্যবর্তী কোন দেশে।
কিন্তু দেখা গেছে অনেক সময় কোন দেশের এক প্রান্তে এই চারটি মান অনুকূলে থাকার পরেও চাঁদ দৃশ্যমান হয়নি আবার অন্য প্রান্তে দেখা গেছে । অনুসন্ধানে দেখা গেছে দিগন্তে হিলাল বা বাঁকা চাঁদ দেখতে পাওয়ার সময় বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা, বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ এবং “শহর ও রাস্তাঘাটের আলো” এগুলোও চাঁদ দেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফলে কোন দেশের পূর্বে চাঁদ দেখা গেলে তার পশ্চিমের দেশে সাধারণভাবে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা বেশী থাকে এবং আরও পশ্চিমের দেশে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু দেখা গেছে চাঁদ দেখার মান অনুকূলে থাকার পরেও কোন দেশে চাঁদ দৃশ্যমান হয় আবার কোন দেশে হয়না এর মূল কারণ মুলত বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা, বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ এবং “শহর ও রাস্তাঘাটের আলো। এই বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে যা আমরা উপরে আলোচনা করার চেস্টা করেছি।
বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ:
অঞ্চলভেদে বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ কম-বেশী হয়ে থাকে। মরু অঞ্চলসমূহে মরু ঝড় হলে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। অপরিকল্পিত শহর, নির্মানাধীন ঘর-বাড়ীর সংখ্যা যেখানে বেশী, রাস্তাঘাটে যানবাহনের দূষিত গ্যাসে যখন বাতাস ভারী থাকে তখন বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ বেশী হয়। আবার শীত প্রধান অঞ্চলে তুষারপাতের পর অথবা কোন অঞ্চলে বৃষ্টির পর আকাশ থাকে স্বচ্ছ নির্মল। বাতাসে ভাসমান ধুলিকণা হিলালের আলো বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিফলিত করে থাকে। এই বিক্ষিপ্ত আলো আমাদের চোখে পৌঁছেনা। যে অঞ্চলে বাতাসে ধুলিকণার পরিমাণ খুব বেশী সেখানে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় হিলাল দেখার সম্ভাবনা কম হবে। দুষিত বাতাসের শহর হলো ঢাকা, মেক্সিকো সিটি, লস-এঞ্জেলেস ইত্যাদি।
ঘনবসতি পূর্ণ এলাকার চেয়ে সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলসমূহে আকাশ তুলনামূলকভাবে থাকে বেশী পরিস্কার। সমুদ্রের ওপারের দিগন্তরেখায় চাঁদ সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়।
কল-কারখানা থেকে নির্গত গ্যাসসমূহে রাসায়নিক উপাদান থাকে যা বাতাসে ঘণীভূত থাকে। বাতাসে যদি ধুলিকনা, রাসায়নিক উপাদান বেশী থাকে তখন বাতাসের স্বচ্ছতা বাধাগ্রস্ত হয়। তখন এ সকল স্থানে সহজে চাঁদ দেখতে পাবার পরিবেশ বজায় থাকে না। দেখা গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চ স্থানসমূহে যেমন পাহাড়ের উচ্চতায় বাতাসের স্বচ্ছতা বেশী থাকায় চাঁদ সহজেই দৃষ্টি গোচর হয়। তবে মনে রাখার বিষয় হচ্ছে, যে চাঁদ দেখা যাবার আকৃতিতে আসে না তা পাহাড়ের চূড়ায় নয় এমনকি প্লেনে চড়েও দেখা সম্ভব নয়।
গ্রামাঞ্চলে গাছ-গাছালি, ঘাস থাকার কারণে ধূলির পরিমাণ কম হয়। নগর এবং শিল্প এলাকার চেয়ে গ্রামাঞ্চলে চাঁদ সহজেই দৃষ্টি গোচর হয়। বিষুবরেখার কাছাকাছি দেশসমূহের আকাশে গড় মেঘের পরিমাণ বেশী থাকে। শীত প্রধান দেশসমূহের আকাশ সাধারণত থাকে পরিষ্কার। মেঘের উপস্থিতিতি চাঁদ দেখাকে বাধাগ্রস্ত করে। যদি কোন স্থানের বাতাস দুষিত থাকে এবং বাতাসের আদ্রতা বেশী হয় তবে হিলালের ১ ভাগেরও কম আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়।
শহর ও রাস্তাঘাটের আলোঃ
রাস্তাঘাটের আলো হিলাল দর্শনে কখনো কখনো বাধার সৃষ্টি করে থাকে। ব্যাকগ্রাউন্ড আলো হিলালের উজ্জলতাকে হার মানায়। এস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরিগুলো এ কারণে শহর থেকে দূরে বসানো হয়।
রাস্তাঘাটের অতিরিক্ত আলো যে অস্বচ্ছ পরিবেশ সৃষ্টি করে তা চাঁদ দেখতে পাবার জন্যে যথেষ্ট বাধার কারণ। দিগন্তরেখার খুব কাছে যে হিলাল দেখা যায় তার মোট আলোর মাত্র পাঁচ ভাগ বাতাস ভেদ করে আসে এবং বাকী ৯৫ ভাগ আলো বিভিন্ন দিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। অনেক সময় আকাশ পরিস্কার থাকলেও রাস্তাঘাটের উজ্জ্বল আলো চাঁদের ম্লান আলোকে বাধাগ্রস্ত করে। দিগন্তরেখার যেখানে চাঁদ দৃশ্যমান হয় সে অংশে ব্যাকগ্রাউন্ড আলো যদি তীব্র হয় এবং তার উজ্জ্বলতা যদি হিলালের আলোর চেয়ে উজ্জ্বল হয় তবে সে আলো চাঁদ দেখতে বাধা সৃষ্টি করবে।
চাঁদ দেখতে পাবার জন্যে “বায়ুস্তরে ভাসমান পদার্থের পরিমাণ” এবং “শহর ও রাস্তাঘাটের আলো” এ ছাড়াও বাতাসের আদ্রতা, তাপমাত্রা, অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিজ্ঞানীরা তাদের চাঁদ দেখার শর্তসমূহের মধ্যে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়েছেন।