আন্তর্জাতিক মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল
১৭ রমাদ্বান শরীফ ১৪৪৫ হিজরী

 

 

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম- খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার সুমহান নছীহত মুবারক

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “তারা আপনাকে বাঁকা চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। আপনি বলুন, এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ ও হজ্জের সময় ঠিক করার মাধ্যম।” কুরআন শরীফ-এ স্পষ্টভাবে বাঁকা চাঁদকে সময় নির্ধারণ করার মাধ্যম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অমাবস্যার চাঁদ, জোছনার চাঁদ, অর্ধ চন্দ্র, সূর্যাস্তের কিছু পূর্বে ডুবে যাওয়া চাঁদ, নির্দিষ্ট বয়সের চাঁদ এসবের উল্লেখ করা হয়নি। অথচ আজকাল ইহুদীদের মদদপুষ্ট খারিজী, রাফিজী, সালাফী, ওহাবী গং কুরআন শরীফ-এর এই আয়াত শরীফ-এর মনগড়া ব্যাখ্যা করে তাদের বানানো নিয়মে মাস শুরু করে যাচ্ছে। আরবী মাসের ২৯তম তারিখে চাঁদ তালাশ করা এবং কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করা শরীয়তের নির্দেশ। এছাড়াও হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা শুরু কর এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর।”
তবে শুধু শা’বান, রমাদ্বান শরীফ, শাওওয়াল এবং যিলহজ্জ শরীফ-এ চাঁদ তালাশ করা ওয়াজিবে কিফায়া- এ ফতওয়াটি আম ফতওয়া। খাছ ফতওয়া হচ্ছে- প্রতি মাসেই চাঁদ তালাশ করা ওয়াজিবে কিফায়া। প্রতি মাসেই মুসলমানদের জন্য রয়েছে বিশেষ বিশেষ কিছু দিন এবং রাত। আর সে কারণে চাঁদ না দেখে মনগড়া তারিখে আরবী মাস শুরু করা কবীরা গুনাহ। এখানে একটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, প্রতি মাসেই চাঁদ তালাশ করা ওয়াজিবে কিফায়া। কিন্তু সঠিক তারিখে মাস শুরু করা ফরয। কেননা সঠিক তারিখে মাস শুরু না হলে অনেক ফরয-ওয়াজিব ইবাদত পালনে ত্রুটি হবে। যেমন রোযা, হজ্জ, দুই ঈদের নামায ইত্যাদি। কাজেই প্রতি মাসে নতুন চাঁদ তালাশ করা শরীয়তে ওয়াজিবে কিফায়া। আর চাঁদ না দেখে মনগড়া তারিখে রোযা শুরু করা ও ঈদ করা কঠিন কবীরা গুনাহ।

সউদী ওহাবী সরকারের বানানো মনগড়া ক্যালেন্ডারের অনুসরণের কারণে প্রতি বছর হজ্জ বাতিল হচ্ছে, রোযা নষ্ট হচ্ছে, ঈদ বাতিল হচ্ছে। সউদী আরব ছাড়াও অনেক মুসলিম দেশেও চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু হচ্ছে না। চাঁদের তারিখ হের-ফের করে সহজেই মুসলমানদের আমল নষ্ট করা যায়। তাই মুনাফিকদের সাথে নিয়ে কাফির-মুশরিকরা সারা বিশ্বে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করার শরীয়তের পদ্ধতির পরিবর্তে তাদের বানানো পদ্ধতি চাপিয়ে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে এখনও বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম দেশের মুসলমানগণ উদাসীন। মুসলমানদের আমল হিফাজতের জন্য, সচেতনতার জন্য আমাদের দেশে এবং বিদেশে চাঁদ দেখে সঠিক তারিখে আরবী মাস শুরু করার অভিপ্রায় নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি “রুইয়াতে হিলাল মজলিস”। রুইয়াতে হিলাল মজলিসের এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করবেন আল্লাহ পাক তিনি যেন তাদের সবাইকে কবুল করেন। (আমীন)

আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি রুইয়াতে হিলাল মজলিস গঠনের কারণ এবং এ যাবৎ রুইয়াতে হিলাল মজলিস থেকে যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে-

চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা নিয়ে শরীয়তে বেশ কিছু মাসয়ালা-মাসায়িল আলোচনা হয়েছে। তবে সকল আলোচনাই হচ্ছে চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা এবং কোন মাসে কতজন দেখলে তা গ্রহণযোগ্য হবে সেসব প্রসঙ্গে। চাঁদের আলোচনায় কোন জটিলতা স্থান পায়নি। এর কারণ চাঁদ দেখে আরবী মাস শুরু করা নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে বা কেউ তা পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করতে পারে তা পূর্ববর্তী মানুষের অনুভূতিতেও জন্ম নেয়নি।

কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেলো চাঁদের তারিখ একদিন হের-ফের করলেই মুসলমানদের অনেক আমল যেমন পবিত্র হজ্জ, দুই পবিত্র ঈদ, বিশেষ দিন এবং রাত সমূহ যেমন শবে বরাত, লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুর রগায়িব, আখিরী চাহার শোম্বাহ, ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ ইত্যাদি মহান দিন এবং রাত্রিগুলোর ফযীলত থেকে বিরত রাখা যায়। সে কারণেই কাফির-মুশরিকরা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু নামধারী মুসলমান মুনাফিক শাসকগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে সেই বিভ্রান্তি সারা পৃথিবীর মুসলমান দেশসমূহে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

পনের শতকের মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি তাদের ষড়যন্ত্রের এই মুখোশ উন্মোচন এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদেরকে সচেতন করার লক্ষ্যে চাঁদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, লেখা-লেখি, ওয়াজ-নসীহত এমনকি আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি গঠন করেছেন।

প্রশ্ন হতে পারে একটি আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি গঠনের পেছনে আর কি কারণ থাকতে পারে আর কমিটির নানা কার্যক্রম গ্রহণের নেপথ্যেই বা কি কারণ রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত ব্যাপক। তবুও সংক্ষেপে বলা যায়- পূর্বে মুসলমানদের মধ্যে আরবী মাস গণনার প্রচলন ছিল। ফলে মাস শেষে অর্থাৎ ২৯তম দিনে সচেতনভাবেই চাঁদ দেখে আরবী মাস গণনা করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে যখন হিজরী তারিখ গণনার পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন হলো তখন চাঁদ দেখার সচেতনতা জনসাধারণ থেকে কমে গেলো। তখন মুসলিম দেশগুলোতে সরকারি তরফ থেকে চাঁদ দেখার কমিটি গঠন করা হলো আরবী তারিখের হিসাব রাখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই চাঁদ দেখা কমিটির চাঁদের তারিখ হিসাব রাখার পদ্ধতি এবং কমিটির সদস্যদের মানসিকতার মধ্যে একটি ব্যাপক পরিবর্তন আসলো ১৯৪৮ সালের পর থেকে। এই পরিবর্তনের নেপথ্য নায়ক ইহুদী মদদপুষ্ট সউদী ওহাবী সরকার।

শরীয়তে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে মাসের ২৯তম তারিখে চাঁদ তালাশ করতে হবে। চাঁদ দেখা না গেলে মাস ৩০ দিনে পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু এই সহজ পদ্ধতি বাদ দিয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশে আরবী মাস গণনা শুরু হতে লাগলো বিভিন্ন মনগড়া পদ্ধতি অনুযায়ী। বিভিন্ন অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ক্রাইটেরিয়া ব্যবহার হতে লাগলো মাস শুরুর ব্যাপারে। সউদী আরব, যে দেশের দিকে তাকিয়ে থাকে সমস্ত মুসলিম বিশ্ব তাদের ক্যালেন্ডার রচনা করার কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ‘উম্মুল কুরা’। এই উম্মুল কুরা চাঁদ দেখে আরবী মাস গণনা না করে একটি নিজস্ব পদ্ধতি তৈরি করে নিয়ে সে অনুযায়ী মাস গণনা করে যাচ্ছে। অনেকের পক্ষেই বিষয়টি গ্রহণ করা কঠিন হলেও এটা সত্য সউদী আরব দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে সঠিক তারিখে মাস গণনা না করার কারণে পবিত্র হজ্জসহ মুসলমানদের অনেক আমল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রতিবাদ করার কেউ নেই। আমরা আপনাদের ধারণা দেবার লক্ষ্যে নি¤েœ কয়েকটি ছক প্রকাশ করলাম।

একটি ছকে দেখা যাবে কিভাবে মুসলিম দেশগুলোতে চাঁদ দেখার সুন্নতী পদ্ধতি বাদ দিয়ে মনগড়া নিয়মে মাস গণনা হচ্ছে। আমাদের দেশেও আরবী মাস শুরু নিয়ে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করেছিল দেশের তথাকথিত এক মুফতী। সামগ্রিকভাবে সকল বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে দেশের মুসলমানদের আমলের সুবিধার্থে আরবী মাসের সঠিক তারিখ জানাবার উদ্দেশ্যে এই আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি ‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ গঠন করা হয়েছে। ১৪২৭ হিজরী সনের পবিত্র যিলহজ্জ মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রুইয়াতে হিলাল মজলিসের জন্ম। প্রথম দিকে এটি জাতীয় পর্যায়ে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে।

এ যাবৎ রুইয়াতে হিলাল মজলিস থেকে যে সব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, সে সবের বিবরণ :

১। দৈনিক পত্রিকাসমূহের মধ্যে একমাত্র বিশ্বে বহুল পঠিত দৈনিক আল ইহসান শরীফ পত্রিকাতেই রুইয়াতে হিলাল মজলিসের যিনি প্রতিষ্ঠাতা এবং পৃষ্ঠপোষক মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ক্বওল শরীফ-এর আলোকে ব্যানার হেডিং প্রকাশ করা হয়।
২। রুইয়াতে হিলাল মজলিসের যিনি সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নির্দেশে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ নিয়মিত চাঁদ বিষয়ে লেখা প্রকাশিত হয়ে আসছে।
৩। চাঁদ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে ধারণা দেবার উদ্দেশ্যে রেসালা প্রস্তুত করা হয়েছে। (প্রকাশের পথে)
৪। প্রথম হিজরী ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়েছে।
৫। রুইয়াতে হিলাল মজলিস শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে চাঁদ দেখার রিপোর্ট সংগ্রহ করে। বাইনোকুলার এবং টেলিস্কোপে চাঁদ দেখার রিপোর্ট গ্রহণ করা হয় না।
৬। দেশের ৬৪টি জেলায় রুইয়াতে হিলাল মজলিসের প্রতিনিধি রয়েছেন যারা শরীয়তের পাবন্দ।
৭। রুইয়াতে হিলাল মজলিস বিভিন্নভাবে লেখা এবং ই-মেইলের মাধ্যমে সউদী ওহাবী সরকারকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছে।
৮। আন্তর্জাতিক কমিটি হওয়াতে বিদেশী মেম্বারদের রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয় এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
৯। রমাদ্বান শরীফ-এ আলাদা সময় সূচি প্রকাশ করতে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে থাকে।
১০। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার দিন-তারিখ বিশ্লেষণ কার্যক্রম নিয়ে থাকে।
১১। মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে চাঁদের উপর সিডি প্রকাশ করা হয়েছে।
১২। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে চাঁদ বিষয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে।
১৩। প্রামাণ্য চিত্রসহ চাঁদ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং হতে থাকবে।
১৪। সউদী আরবের মাস গণনার পদ্ধতির ত্রুটির উপর প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৫। বিশ্বে প্রথম নামাযের সময় সূচিতে ইশরাক, চাশত এবং তাহাজ্জুদ ওয়াক্ত সন্নিবেশন করা হয়েছে।

রুইয়াতে হিলাল মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা যেহেতু আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম- খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম; সেহেতু বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক হারে বাড়ছে। প্রায় প্রতি মাসে বিশেষ করে যে সকল মাসগুলোতে ফযীলতপূর্ণ বিশেষ দিন এবং রাত থাকে সে দিন এবং রাতগুলো সঠিকভাবে পালন করার জন্য আমল করার জন্য দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য-অগণিত মানুষ ফোনের মাধ্যমে সঠিক তারিখ জেনে থাকেন। ফলে রুইয়াতে হিলাল মজলিসের সদস্য হওয়া, এর কার্যক্রম সহায়তা করা মূলত সদকায়ে জারিয়ার কাজে সহযোগিতা করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে এর কার্যক্রমে সফল ভূমিকা রাখার তাওফীক দান করুন। (আমীন)